ইন্দুরকানী

ইন্দুরকানী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটির জীর্ণতায় ভোগান্তির শেষ নেইঃ মাত্র একজন মে‌ডি‌কেল অ‌ফিসার দি‌য়ে চল‌ছে এ হাসপাতাল‌টি।

ইন্দুরকানী প্রতিনিধিঃ
লক্ষাধিক লোকের স্বাস্থ্য সেবার প্রাণ কেন্দ্র পিরোজপুরের ইন্দুরকানী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটির জীর্ণতায় ভোগান্তির শেষ নেই। বর্তমান ক‌রোনা প‌রি‌স্থি‌তি‌তে এ হাসপাতা‌লটি ক‌রোনা রোগী‌দের জন্য এক‌টি আদর্শ চি‌কিৎসা কেন্দ্র হ‌তে পারত। অথচ নেই তেমন কোন ব্যবস্থা। মাত্র একজন মে‌ডি‌কেল অ‌ফিসার দি‌য়ে চল‌ছে এ হাসপাতাল‌টি। এখা‌নে নানা কারণে এক যুগেও চালু হয়নি ইনডোর সেবা।
জানা যায়, বর্তমানে ৩১ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালটি ৫০ শয্যায় উন্নীত করণের কাজ চলমান রয়েছে। পুরাতন মূল ভবনটি দ্বিতীয় তলা থেকে চতুর্থ তলায় উন্নীতকরণের কাজ চলছে। নতুন করে নির্মাণ করা হচ্ছে পাঁচ তলা একটি নয়নাভিরাম ভবন। যেখানে থাকবে অফিস কক্ষ এবং আউটডোর সেবার কার্যক্রম। ডাক্তারদের জন্য ডরমেটরি এক তলা থেকে চতুর্থ তলায় উন্নীত করা হয়েছে। তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারীদের জন্য দ্বিতীয় তলা ভবনটি কে চতুর্থ তলায় উন্নীত করা হয়েছে। নার্সদের দ্বিতীয় তলা ভবনটিকে করা হয়েছে তৃতীয় তলায় উন্নীত। স্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগ ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে এই কাজ শুরু করে। চলতি মাসে নির্মাণাধীন এসকল ভবন হস্তান্তরের কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত হস্তান্তর করতে পারেনি স্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগ। যদিও তাদের প্রায় ৭০ ভাগ কাজ ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে।
ইন্দুরকানী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসবাবপত্র, মেডিকেলের বিভিন্ন সরঞ্জামাদীসহ রয়েছে একসেট অফিস ব্যবস্থাপক। চলছে আউটডোর সেবাও। রয়েছে দুটি উন্নতমানের এ্যাম্বুলেন্স। শুধু মাত্র পানি ও ডাক্তারের অভাবে হাসপাতালটিতে রোগী ভর্তি করে আবাসিক চিকিৎসা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। ২০০৮ সালে ২৩ শে ডিসেম্বর চালু হওয়ার পরে এপর্যন্ত ইনডোর সেবা চালু হয় নাই হাসপাতালটিতে। ফলে ইন্দুরকানী উপজেলার লক্ষাধিক মানুষ পিরোজপুর, খুলনা, বরিশাল এমনকি ঢাকাতে গিয়েও চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করতে বাধ্য হচ্ছে।
হাসপাতালটি তে বর্তমানে ছয় জন চিকিৎসক পদায়ন দেয়া রয়েছে। কিন্তু কার্যক্রম পরিচালনা করছেন মাত্র একজন চিকিৎসক। বাকিদের সবাই রয়েছেন ডেপুটেশনে বিভিন্ন হাসপাতালে। নার্স, ওয়ার্ডবয়, আয়া, ক্লিনার, অফিস সহায়ক সহ অধিকাংশ কর্মকর্তা-কর্মচারীরাই ডেপুটেশনে বিভিন্ন জায়গায় কর্মরত রয়েছেন।
হাসপাতালের বহির্বিভাগে জরুরি চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হচ্ছে নিয়মিত। এছাড়া ইপিআই টিকা, যক্ষা রোগের চিকিৎসা, কমিউনিটি ক্লিনিকের ব্যবস্থাপনা, মা ও শিশু বিভাগের যাবতীয় চিকিৎসা এখান থেকে নিয়মিত প্রদান করা হচ্ছে।

হাসপাতালটির সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে পানির সমস্যা। খাবার পানির তীব্র সংকট থাকায় হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা রোগীদের অনেক সমস্যায় পড়তে হয়। এছাড়া হাসপাতালে কর্মরত সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী কোন পানির সংকটে ভুগে থাকেন।
তারপরেও শুধু মাত্র ডাক্তারের অভাবে হাসপাতালটির ইনডোর সেবা চালু হচ্ছে না। ইনডোর সেবা চালুর দাবীতে এই এলাকার মানুষ বিভিন্ন সময় মানববন্ধন সহ নানান কর্মসূচী পালন করেছে। এটা চালু হাওয়াই ছিল তাদের প্রাণের দাবী।
এ বিষয়ে ইন্দুরকানী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বর্তমানে কর্মরত একমাত্র মেডিকেল অফিসার আমিনুল ইসলাম জানান, ইন্দুরকানী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ছয়জন ডাক্তারের পদায়ন দেয়া থাকলেও বর্তমানে আমাকে একাই কাজ করতে হচ্ছে। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা তিনি অসুস্থ। এছাড়া যাদের এখানে পদায়ন করা হয়েছে তাদের বেশিরভাগ অন্যত্র ডেপুটেশনে রয়েছেন। সবকিছু এখন আমাকে সামলাতে হচ্ছে। জরুরী ভিত্তিতে এখানে ডাক্তার এবং কর্মচারীদের পদায়ন করা প্রয়োজন। আমরা উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়গুলো অবহিত করেছি। তারা ব্যবস্থা নিলেই দ্রুত ইনডোর চালু করা সম্ভব হবে।
অপর দিকে হাসপাতালে ব্যবহার ও খাবার পানির তীব্র সংকট রয়েছে। শুধু মাত্র একটি পুকুরের পানির উপরে নির্ভর করতে হয়। যেটা বর্ষার পানিতে পূর্ণ হয়ে থাকে। শীতের মৌসুমে শুকিয়ে যায়। পানির সমস্যার সমাধান করা জরুরী। না হলে হাসপাতাল পুরো দমে চালুর পরে সমস্যা মারাত্মক আকার ধারণ করবে।

Comment here