অপরাধভান্ডারিয়া

ভাণ্ডারিয়ায় জিআরের চাল আত্মসাতের অভিযোগঃ তদন্তে দুর্নীতি দমন কমিশন

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস সংক্রমণের এই কঠিন দুর্যোগের সময়েও দরিদ্র মানুষকে সহায়তার জন্য বরাদ্দ করা সরকারি চালের একাংশ লুটপাট করছে চক্র। কতিপয় জনপ্রতিনিধি ও সরকারি কর্মকর্তা-কর্মাচারী মিলেমিশে আত্মসাত্ করছে গরিবের চাল। এই জনপ্রতিনিধিদের অধিকাংশই ক্ষমতাসীন দলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বারবার এ ব্যাপারে কঠোর হুঁশিয়ারি দিলেও চক্র তা ভয় পাচ্ছেনা। জনপ্রতিনিধি ও কর্মকর্তা-কর্মচারীর মিলিত সিন্ডিকেটের এই অপকর্মের দোষ গিয়ে পড়ছে সরকারের ওপর। সরকারি ত্রাণের চাল লুটপাটের ঘটনা সব সরকারের আমলেই কম-বেশি ঘটলেও করোনা ভাইরাস মহামারির মধ্যেও দুস্থদের মুখের গ্রাস কেড়ে নিতে এতটুকু কাঁপছে না এই লুটেরা চক্রের হূদয়। এমন একটি ঘটনা ঘটেছে পিরোজপুরের ভাণ্ডারিয়ার ইকড়িতে।
একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত খবর থেকে জানা গেছে, পিরোজপুর জেলার ভাণ্ডারিয়া উপজেলার ইকড়ি ইউনিয়নেও করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় মানবিক সহায়তা কর্মসূচির আওতায় স্থানীয় কর্মহীন হয়ে পড়া শ্রমজীবী ও নিম্ন আয়ের অসহায় লোকজনের মধ্যে বিতরণের জন্য বরাদ্দকৃত জিআরের চাল আত্মসাতের ঘটনা ঘটেছ। ঘটনাটি তদন্ত করে জড়িতদের ধরতে মাঠে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
জানা গেছে, ইকড়ি ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ১ নম্বর ওয়ার্ড মেম্বর মো. মওদুদ আহম্মেদ লাভলু, ২ নম্বর ওয়ার্ড মেম্বর মো. রফিকুল ইসলাম, ৩ নম্বর ওয়ার্ড মেম্বর শিশির হালদার, খোকন সিকদার চক্র গত সোমবার জিআর চালের ছয় বস্তা (প্রায় ৬০০ কেজি) আত্মসাত্ করেন। আত্মসাত্কৃত এই চাল বিকালে পাঠিয়ে দেওয়া হয় স্থানীয় ভোলানাথের ছেলে ভ্যানচালক জীবনের বোথলা বাজারসংলগ্ন বাড়িতে। ভ্যানে করে জীবনের বাড়িতে সরকারি ত্রাণের চাল আনার বিষয়টি টের পান স্থানীয়রা। চাল আত্মসাতের সঙ্গে জড়িত খোকন সিকদারের ভাই কবির সিকদার এবং স্থানীয় মহিউদ্দিন খলিফার ছেলে সাইদুল খলিফা বিষয়টির প্রতিবাদ জানিয়ে হইচই করেন। এতে স্থানীয় লোকজন, সাংবাদিক ও প্রশাসনও বিষয়টি জেনে যায়। প্রশাসনের তত্পরতা টের পেয়ে আত্মসাতের ঘটনা ধামাচাপা দিতে ইকড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবিরের নেতৃত্বে খোকন সিকদার, শিশির, লাভলু মেম্বারসহ স্থানীয় কতিপয় প্রভাবশালী ব্যক্তি সোমবারই সন্ধ্যায় গোপন বৈঠক করেন কবির সিকদারের (আত্মসাতের সঙ্গে জড়িত খোকন সিকদারের ভাই) বাড়িতে। প্রশাসনের চোখ এড়াতে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে জীবনের বাড়িতে রাখা চাল তড়িঘড়ি করে অন্যত্র সরিয়ে ফেলা হয়।
আরো জানা গেছে, ইকড়িতে সরকারি চাল আত্মসাতের বিষয়টি পিরোজপুর জেলা প্রশাসক আবু আলী মো. সাজ্জাদ হোসেন (ডিসি) জানতে পারেন। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে পাঠান ডিসি। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রাত সাড়ে ৮টার দিকে জীবনের বাড়িতে গিয়ে আত্মসাত্কৃত চালের বস্তা না পেয়ে উলটো তথ্যদাতা সাইদুল খলিফাকে বকাঝকা করেন। তবে জীবনের মা প্রশাসনের লোকজনকে জানান, তার ছেলে ভ্যানে করে বিভিন্ন মানুষের পাঁচ-ছয় বস্তা চাল বাসায় নিয়ে আসে এবং পরে সেগুলো অন্যত্র নিয়ে যায়। ভাণ্ডারিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম মাকসুদুর রহমান বিষয়টি সম্পর্কে অবগত বলে জানা গেছে।

Comment here