নেছারাবাদ/স্বরূপকাঠি

স্বরুপকাঠীতে নারায়ণগঞ্জ ফেরত লোকজনকে কোয়ারেন্টাইনে নিতে গিয়ে সংঘর্ষঃ আহত ৭

স্বরূপকাঠি প্রতিনিধিঃ
পিরোজপুরের স্বরুপকাঠী উপজেলায় নারায়ণগঞ্জ জেলা থেকে ট্রলারে আসা ১৯ ব্যক্তিকে সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী কোয়ারেন্টাইনে নিতে গিয়ে সংঘর্ষে পুলিশ ও গ্রামবাসীদের মধ্যে সংঘর্ষে পুলিশ, সাংবাদিক, চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যসহ ৭ জন আহত হয়েছে। ৭ জন আহত হয়েছে। গুরুতর আহত একটি বেসরকারী টেলিভিশনের স্থানীয় প্রতিনিধি গোলাম মোস্তফাকে স্বরুপকাঠী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকেলের দিকে এ ঘটনা ঘটে।
জানা যায়, বৃহস্পতিবার সকালে নারায়ণগঞ্জ শহর থেকে একটি ভাড়া করা ট্রলারে করে উপজেলার বলদিয়া ইউনিয়নসহ পাশ্ববর্তী এলাকার কিছু লোক বলদিয়া ইউনিয়নে আসে। বিষয়টি স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ শহিন মিয়া প্রশাসনকে জানায়।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সরকার আবদুল্লা আল মামুন বাবু ওই লোকদেরকে একটি বিদ্যালয়ে কোয়ারেন্টাইনে রাখার জন্য বলদিয়া ইউপি চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দেন। নির্দেশ পেয়ে বৃহস্পতিবার বিকেলে নারায়ণগঞ্জ থেকে আসা ১৯ জনকে ইউনিয়নের কাটাপিটানিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কোয়ারেন্টাইনে রাখতে নিয়ে যায় ইউপি চেয়ারম্যান। এসময় ইউপি সদস্য সুখলাল ঢালী ও রনজিত বেপারীর নেতৃত্বে স্থানীয়রা বলদিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মো. শাহিন মিয়া ও পুলিশের উপর চড়াও হয়। এলাকার কয়েকশ’ মানুষ লাঠিসোটা নিয়ে চেয়ারম্যান ও পুলিশের উপর হামলা চালায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ লাঠিচার্জ করে। হামলায় সাংবাদিক গোলাম মোস্তফা, পুলিশ সদস্য তাজেল, আল মামুন, ইউপি সদস্য মো. সুমন ও চেয়ারম্যানের ব্যক্তিগত গাড়ির চালক মাসুম বিল্লাহ আহত হয়। ঘটনার ভিডিও ধারণ করায় সাংবাদিক গোলাম মোস্তাফার উপর ক্ষিপ্ত হয়ে পিটিয়ে পা ভেঙ্গে দেন হামলাকারীরা।
উপজেলার বলদিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শাহীন আহম্মেদ জানান, বৃহস্পতিবার সকালে নারায়নগঞ্জ থেকে একটি বড় ট্রলারযোগে বিভিন্ন ধরণের মালামালসহ পিরোজপুরের নেছারাবাদ, ভান্ডারিয়া ও কাউখালী উপজেলার ১৯ ব্যক্তি বলদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সামনে আসেন। সেখানে তারা ট্রলার থেকে নামতে চাইলে স্থানীয়রা তাদের বাঁধা দেয় এবং তারা বিষয়টি উপজেলা প্রশাসন ও নেছারাবাদ থানায় অবহিত করে। পরবর্তীতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও নেছারাবাদ থানার ওসির মতামতের ভিত্তিতে নারায়নগঞ্জ থেকে আগতদের ওই ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ডের কাটাপিটানিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কাম সাইক্লোন শেল্টারে ১৪ দিন কোয়ারিন্টিনে রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তখন ট্রলারটি সেখানে নিয়ে যাওয়া হয়। ট্রলারে আগতরা করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত এই দাবিতে স্থানীয়রা তাদেরকে ওই সাইক্লোন শেল্টাতে উঠতে বাঁধা দেয়। খবর পেয়ে নেছারাবাদ থানার পুলিশ, ইউপি চেয়ারম্যান শাহীন ও স্থানীয় এক সাংবাদিক ঘটনাস্থলে যাওয়ার পর স্থানীয়রা তাদের উপর ক্ষিপ্ত হন।
এসময় ইউপি সদস্য সুখলাল ঢালী ও রনজিত বেপারীর নেতৃত্বে স্থানীয়রা বলদিয়া ইউপি চেয়ারম্যান শাহিন আহম্মেদ ও পুলিশের উপর চড়াও হয় । এক পর্যায়ে এলাকার কয়েক শত মানুষ লাঠিসোটা নিয়ে চেয়ারম্যান ও পুলিশের উপর হামলা চালায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ লাঠিচার্জ করে। হামলায় চেয়ারম্যান শাহীন,সাংবাদিক গোলাম মোস্তফা, পুলিশ সদস্য তাজেল, আল মামুন, ইউপি সদস্য মো. সুমন, ৮ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি বাচ্চু, ও চেয়ারম্যানের ব্যক্তিগত গাড়ীর চালক মাসুম বিল্লাহ আহত হয়। ঘটনার ভিডিও ধারন করায় সাংবাদিক গোলাম মোস্তাফার উপর ক্ষিপ্ত হয়ে পিটিয়ে তার পা ভেঙ্গে দেন হামলাকারীরা। এ সময় হামলাকারীরা দুইটি মোটরসাইকেল ভাংচুর করে।তবে অভিযুক্ত সুখলাল ঢালী ও রনজিত বেপারীর মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায়, তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
এ বিষয় থানার অফিসার ইনচার্জ মো.কামরুজ্জামান তালুকদার জানান, বর্তমান সময় বাইরে থেকে লোক আসায় মানুষের মধ্যে ভীতি কাজ করে বলেই তাদেরকে কোয়ারেন্টাইনে রাখার চেষ্টা করছি। কিন্তু কিছু না বুঝেই কাটাপিটানিয়া গ্রামের মানুষকে চটিয়ে দিয়ে এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সরকার আবদুল্লাহ আল মামুন বাবু বলেন, ‘গত কয়দিনে ঢাকা ও নারায়নগঞ্জ থেকে ট্রলারে করে বহু লোক এলাকায় এসেছেন বলে খবর পাচ্ছি। মানবিক কারনে তাদের নিরাপদ দুরত্বে কোয়ারেন্টিনে রাখার চেষ্টা করছি।’
পিরোজপুরের পুলিশ সুপার হায়াতুল ইসলাম খান জানান, বাইরে থেকে আসা মানুষদের হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা নিয়ে ঘটনায় ২ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছে। হামলার বিষয়ের চেয়ে বাহির থেকে আসা মানুষগুলোকে নিরাপদ আশ্রয়ে রাখা ও তাদের প্রয়োজনীয় খাবারের বিষয়টি গুরুত্ত্ব দেয়া হচ্ছে। পুলিশ সদস্যরা এ বিপদের সময় সকাল থেকে রাত পরর্যন্ত জীবনের ঝুকি নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে।

Comment here