ব্রেকিং নিউজ

নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় পিরোজপুরে ৭ উপজেলার ১৭০ গ্রাম প্লাবিত

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
উপকূলীয় জেলা পিরোজপুরে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। একদিকে হালকা দমকা বাতাস, উত্তরাঞ্চলের বন্যার পানি ভাটি অঞ্চলে ধেয়ে আসা এবং সর্বোপরি অমাবশ্যার জোঁয়ার ও অতিবর্ষণের কারণে পিরোজপুরসহ সন্নিহীত উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।
জোয়ারের পানিতে জেলার ১৭০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে জেলার ভেতর দিয়ে বয়ে যাওয়া কালিগঙ্গা, তালতলা, মধুমতি, কচা, সন্ধ্যা ও বলেশ্বর নদীর পানি বেড়ে বিপৎসীমায় উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ সব নদীর তীরবর্তী গ্রামগুলো প্লাবিত হয়েছে। গত ৪ দিন ধরে বৃষ্টিতে বৃহস্পতিবার নদীর পানি স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে তিন থেকে চার ফুট পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নদী তীরবর্তী অনেক গ্রাম ও হাট বাজারসহ নিম্নাঞ্চল ডুবে গেছে। তলিয়ে গেছে রোপা আমনের বীচতলা। তেমনি বিভিন্ন সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় সাধারণের চলাচলে ভোগান্তির সৃষ্টি হয়েছে।

উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের দেওয়া তথ্য মতে, জেলার সদর উপজেলার ২৭টি, ইন্দুরকানী উপজেলার প্রায় ২৭টি, কাউখালী উপজেলার ৪০টি, মঠবাড়িয়া উপজেলার ৩টি, ভান্ডারিয়া উপজেলার ২৫টি, নাজিরপুরের ৩০টি, নেছারাবাদ উপজেলার ১৮/২০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এর আগে গত বুধবার (১৯ আগস্ট) প্লাবিত গ্রামের সংখ্যা ছিলে ৭৫টি।
শুক্রবার দুপুরে বলেশ্বর-কচা নদীর টগড়া-চরখালী ফেরীঘাট ও ভান্ডারিয়া উপজেলার তেলিখালী ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা ও চরাঞ্চল ঘুরে দেখা যায়, নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এর ফলে পিরোজপুর সদরসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলার গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে নদী ভাঙ্গন। গত ৪৮ ঘন্টায় কচা, বলেশ্বর, কালিগঙ্গা ও মধুমতিসহ জেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত নদ-নদীর পানি স্বাভাবিকের চেয়ে ৪/৫ ফুট বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে, কৃষি বিভাগ বলছে, বর্ষা ও জোঁয়ারের পানি উঠতি আউশ ও রোপনকৃত আমনের বীজ তলার জমিতে অন্তত এক সপ্তাহ নিমজ্জিত থাকলে পচে যাবার সম্ভাবনা থাকে।
এছাড়া, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাঠ, কাঁচা-পাকা রাস্তা, মাছের ঘের, অধিকাংশ বাড়ির আঙিনাসহ সবজি ক্ষেত, বাগান ও খেলার মাঠে পানি বৃদ্ধি পেয়ে নিমজ্জিত হয়েছে। পিরোজপুরে জোয়ারের অতিরিক্ত পানিতে অন্তত ৮০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।

জানা গেছে, জেলার মধ্য থেকে বয়ে কালিগঙ্গা, তালতলা, মধুমতি, কচা, সন্ধ্যা ও বলেশ্বর নদীতে স্বাভাবিকের থেকে জোয়ারের পানি ৪/৫ ফুট বেশি হয়েছে। ফলে নদী তীরবর্তী গ্রামগুলোতে জোয়ারের অতিরিক্ত পানি এসে ইতোমধ্যে প্লাবিত হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সদর উপজেলার চার, ইন্দুরকানী উপজেলার প্রায় নয়টি, কাউখালী উপজেলার প্রায় ৩০ গ্রাম, মঠবাড়িয়া উপজেলার সবগ্রাম, ভান্ডারিয়া উপজেলার আট, নাজিরপুরে ১৫, নেছারাবাদ উপজেলার গ্রামগুলো প্লাবিত হয়েছে।
জেলার ইন্দুরকানী উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মো. রুহুল আমীন জানান উপজেলার নদী তীরবর্তী এলাকাগুলো জোয়ারের অতিরিক্ত পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এর মধ্যে কালাইয়া, পূর্ব ইন্দুরকানী, খোলপেটুয়া, ট্যাংরাখালী, চন্ডিপুর, সাউদখালী, চরবলেশ্বর, পাড়েরহাটের আবাসন এলাকা, চরখালী ফেরিঘাট এলাকা প্লাবিত হয়েছে। ওই সব এলাকার অধিকাংশ বাড়ি প্লাবিত হয়েছে।
জেলার কাউখালী উপজেলা চেয়ারম্যান আবু সাঈদ মনু জানান, উপজেলার ৫টি ইউনিয়নের প্রায় ৩০টি গ্রাম পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এতে সবজি ক্ষেতসহ মাছের ঘেরের বেশ ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। উপজেলার বিশিষ্ট সমাজসেবক আব্দুল লতিফ খসরুর নিজস্ব উদ্যোগে বুধবার উপজেলার বিভিন্ন স্থানে পানিবন্দি অসহায় পরিবারকে খাবার পৌঁছে দেন বলে স্থানীয়রা জানান।
মঠবড়িয়া পৌর এলাকার বাসিন্দা আবুল বাশার জানান, পৌর এলাকার ৭ ও ৮ নম্বর ওয়ার্ড প্লাবিত হয়েছে। এছাড়া স্থানীয় বলেশ্বর নদীর তীরবর্তী কয়েকটি গ্রামে জোয়ারের পানি উঠলেও ভাটার সময় তা নেমে যায়। তিনি জানান, আর একটু পানি বাড়লেই তার ঘরে পানি উঠবে।
ভান্ডারিয়া পৌর এলাকার বাসিন্দা সাংবাদিক মোঃ সফিকুল ইসলাম মিলন জানান, উপজেলার তেলিখালী, হরিনপালা, বোতলা,পশারিবুনিয়া, নদমুলা, হেতালিয়া, দারুল হুদা গ্রামের অধিকাংশ বাড়িতে পানি উঠেছে। এছাড়া পৌর এলাকার প্রায় অর্ধশত পরিবার ইতোপূর্বে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। সদর উপজেলার কলাখালী ইউনিয়নের কলাখালী গ্রাম, হুলারহাট ও বেকুটিয়ার নদী তীরবর্তী এলাকা, জুজখোলা গ্রামের কিছু অংশ পানিতে প্লাবিত হয়েছে।

প্যানেল মেয়র মিনারা বেগম জানান, পিরোজপুর শহরের নিম্নাঞ্চল জেলা প্রশাসকের বাংলো এলাকা, সরকারি বালক বিদ্যালয় এলাকা, সিআই পাড়া, মধ্যরাস্তা ও শেখপাড়া , আদর্শ পাড়া ও নামাজপুর প্লাবিত হয়েছে।
নাজিরপুর উপজেলার দেউলবাড়ি ইউপি চেয়ারম্যান মাস্টার মো. অলিউল্লাহ জানান, তার ইউনিয়নের মনোহরপুর, পদ্মডুবি, দেউলবাড়ি, সোনাপুর, উত্তর গাওখালী, উত্তর পাকুরিয়াসহ নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।
উপজেলার কলারদোয়ানিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মো. হাসানাত ডালিম জানান, ওই ইউনিয়নের খলনি, কাশ্মির, মুনিরাবাদ, পাতাখালীসহ কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকার কিছু কাঁচা রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া ওই উপজেলার সাচীয়া, ঝনঝনিয়া, শ্রীরামকাঠীর ইউনিয়নের পূর্বকালিকাঠী মধুরাবাদ, কাছিচিড়া এলাকা পানিতে প্লাবিত হয়েছে।
জেলার নেছারাবাদ উপজেলা আব্দুল হক জানান, উপজেলার আরামকাঠী, কামারকাঠী, জগন্নাৎকাঠী, সদর, জলাবাড়ি, আটঘর কুরিয়ানার কিছু অংশসহ নয়-১০টি গ্রামে জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়।
জেলার নাজিরপুর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা গৌতম মন্ডল জানান, পানি বাড়তে পারে এমন আশঙ্কা করে ইতোমধ্যে উপজেলার বিভিন্ন মৎস্য চাষিদের তাদের ঘেরের মাছ রক্ষার জন্য সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে মৎস্য চাষিদের সার্বিক খোঁজ-খবর নেওয়াসহ তদারকি করা হচ্ছে।
জেলা প্রশাসক আবু আলী মোঃ সাজ্জাদ হোসেন জানান, প্লাবিত গ্রামগুলো অসহায় মানুষদের সার্বিক সহযোগিতার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানদের ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের তালিকা তৈরি করতে বলা হয়েছে। যেকোনো ক্ষতি বা পানিবন্দি পরিবারকে সব রকম খাদ্য ও আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে। এছাড়া আমার ব্যক্তিগত তহবিল থেকেও ছোট খাট সাহায্য দিতে প্রস্তুত আছি বলে জানান জেলা প্রশাসক।

Comment here