অপরাধ

পিরোজপুরে ‘ক্রিষ্টাল মেথের’ শেল্টার দাতা গডফাদার ও ডিলাররা ধরাছোঁয়ার বাইরে

বিশেষ প্রতিবেদকঃ
“ক্রিষ্টাল মেথ” নিয়ে গ্রেপ্তার কারান্তরীন সেই মাদক ব্যবসায়ী মাসুম খান (রাজ) নামে এই আওয়ামী লীগ নেতা জেলে রয়েছেন বহাল তবিয়াতে। যা চাচ্ছেন তাই পাচ্ছেন কারাগারে। অন্য দিকে তার সহযোগী ও গডফাদাররা রয়ে গেছে ধরা ছোঁয়ার বাইরে। এই গডফাদার লোকদের পালিতরা জেল গেটে দেখা করে, খোঁজ খবর নিয়ে পরবর্তী কাজের দিক নির্দেশনা দিচ্ছেন।
জানা যায়, এই গড ফাদারদের হাত এতোই লম্বা, যাতে খুব সহসাই জামিনে মুক্তি পেয়ে যেতে পারেন এই মাদক রাজ। স্থানীয় সুত্র ও তথ্যের ভিত্তিতে জানা গেছে, গোটা বরিশাল বিভাগের কিছু অংশ এবং গোটা পিরোজপুর অঞ্চলে এই ভয়নাক মাদক ব্যবসার মূল হোতা রাজ। ক্রিষ্টাল মাদক ছাড়াও এই রাজ ছিল ইয়াবা ও ফেনসিডিলের মূল কারবারী। মৃলত পিরোজপুরের সাত থানায় এই রাজের এক ডজন ডিলার আছে। মূলত এই ডিলারদের মাধ্যমেই তারা সর্বত্র ছড়িয়ে দেয় এই মাদের ভয়াল থাবা।
গডফাদারের তালিকায় যাদের যাদের নাম এসেছে তাদের বিরুদ্ধে ও আইন পদক্ষেপ নিবেন বলে জানিয়েছেন র্যাব সদর দপ্তরের অধিনস্তরা।
র্যাব সৃত্র জানায়, আমরা বেশ কিছু গড ফাদারের নামের তালিকা পেয়েছি। এরা সমাজের গন্য মান্য রাজনৈতিক বিশিষ্ট ব্যবসায়ী। মূলত এদের শেল্টারেই গোটা পিরোজপুরসহ আশপাশের জেলাগুলোতে চলে এ ব্যবসা। যতদূর জানা যায়, ১৮৮৭ সালে মারাত্মক সব ড্রাগের ওপর গবেষণা ও উৎপত্তি হয়েছিল জার্মানিতে। যুদ্ধবিমান চালকদের সারাক্ষণ নির্ঘুম রাখতে তারা নিজেদের সৈন্যের সঙ্গে জাপানিজ পাইলটদেরও কড়া ড্রাগ ব্যবহারে উৎসাহিত করে। সে সময়ে আবিষ্কৃত হয় ক্রিস্টাল ড্রাগ। পরে এর নাম পরিবর্তিত হয়ে কোথাও ক্রিস্টাল মেথ, কোথাও আইস, এক্সথেসি, কোথাও ‘ম্যাড-ড্রাগ’ এবং এলাকাভেদে নানা ছদ্মনামে এর ব্যবহার চালু থেকে যায়।
১৯৬০ সালে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে এর ব্যবহার শুরু হয়ে যায়। এরপর উত্তর আমেরিকার যুবকদের হাতে কোনোভাবে পৌঁছে গেলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ১৯৭০ সালে এটিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। এরপর ১৯৯০ সালে আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে ক্রিস্টাল ড্রাগ ঢুকে পড়ে। ২০১০ সালে অস্ট্রেলিয়া হয়ে সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, লাওস, চীন, থাইল্যান্ড, মিয়ানমার হয়ে বাংলাদেশে এর ব্যবহার শুরু হয়। তবে দাম অনেক বেশি হওয়ায় আমাদের দেশে সে সময় সাধারণের মাঝে এর ব্যবসা জমে ওঠেনি। পিরোজপুরে যে চালানটি ধরা পড়ে তা বাংলাদেশের চতুর্থ চালান বলে জানা যায়।
এ ব্যপারে পিরোজপুরের এসপি সাঈদুর রহমান বলেন, মাদক নির্মূলে পুলিশ কাজ করছে। মাদক ব্যবসায় যে গডফাদার আর ক্ষমতাধর হোক না কেন। কোন ছাড় নেই। এই গডফাদারদের ব্যাপারে আরো তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। খুব শিঘ্রই এদের ধরতে অভিযান।
পিরোজপুরে র্যাবের হাতে‘ক্রিষ্টাল মেধ আইস’সহ আটক টোনা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক মাসুম খান রাজকে দুই দিনের রিমান্ডে দিয়েছে আদালত। র্যাবের দায়ের করা মামলায় পুলিশ মাসুম খানকে আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করে। সোমবার আদালত মামলার শুনানী শেষে দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে।
পিরোজপুর সদর থানার ওসি আ জ ম মাসুদুজ্জামান জানান, মাদক মামলায় আটক মাসুম খানকে আদালত দুই দিনের রিমান্ড মন্জুর করেছে। তিনি জানান, মাসুম খান পিরোজপুরের তালিকাভুক্ত মাদক ব্যবসায়ী। তার বিরুদ্ধে পিরোজপুর থানায় মাদক মামলাসহ সন্ত্রাসী কার্যকলাপের একাধিক মামলা রয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ১৭ জুলাই রাতে বরিশাল র্যাব-৮ এর একটি দল অভিযান চালিয়ে পিরোজপুর সদর থানার টোনা ইউনিয়নের ওদনকাঠী এলাকার নিজ বাড়ি থেকে ১০০ গ্রাম মূল্যবান মাদকদ্রব্য ‘ক্রিষ্টাল মেধ আইস’সহ মাসুম খান রাজকে গ্রেফতার করে। র্যাব গোপন সংবাদের ভিত্তিতে মাসুম খানের বাড়িতে অভিযান চালালে তার বাড়ির চারিপাশে লাগানো সিসিটিভি ক্যামেরায় র্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে সে বাড়ির পিছন থেকে বাগানের মধ্য দিয়ে পালানোর চেষ্টা করলে র্যাব সেখান থেকে তাকে আটক করে। পরে তার বাড়ি তল্লাশী করে ক্রিষ্টাল মেধ আইস মাদক উদ্ধার করে। উদ্ধারকৃত মাদকদ্রব্যের মূল্য প্রায় ১৫ লাখ টাকা বলে জানিয়েছে র্যাব।

Comment here