নাজিরপুর

নাজিরপুরে পাতার তৈরি ভাঙা ঘরে মুক্তিযোদ্ধার পরিবার

নাজিরপুর প্রতিনিধিঃ
বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলুর রহমানের ছোট মেয়ে সেলিনা আক্তার বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধাদের ঘর বিতরণ তালিকা প্রণয়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কঠোর নির্দেশনা রয়েছে। এরপরও আমার বাবার নামটি তালিকায় স্থান পেয়েও কী কারণে বাদ পড়েছে, তা জানি না।’
একটি বসতভিটার ওপর দাঁড়িয়ে আছে কয়েকটি বাঁশের খুঁটি। চারদিকে প্রায় খোলামেলা। তবে খুঁটির ওপর নারকেলপাতা ও প্লাস্টিক দিয়ে ছাউনির তৈরি ঘর। সেখানেই বছরের পর বছর পরিবার নিয়ে বাস করছেন পিরোজপুরের নাজিরপুরের মাটিভাঙ্গা ইউনিয়নের প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলুর রহমানের পরিবার।
দেশ বাঁচাতে মুক্তিযুদ্ধের সংগ্রাম শেষে এই ভিটাই ছিল তার শেষ জীবনের প্রাপ্তি। তার পরিবারের থাকার জায়গাও এটি। এরপরও অসচ্ছল এই পরিবারকে সরকারি ঘর বরাদ্দের তালিকা থেকে বাদ দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। জেলা প্রশাসন বলছে, মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য পরবর্তী ঘরের বরাদ্দ এলেই তাকে দেয়া হবে।
স্থানীয় লোকজন জানান, ফজলুর রহমানের জীবদ্দশা কেটেছে অভাবে। ভালো একটি ঘর তার ভাগ্যে জোটেনি। নারকেলগাছের পাতার ছাউনি আর বাঁশ-খুঁটির ঘরেই মৃত্যু হয়েছে তার। বর্তমানে ঘরটি জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে আছে।
প্লাস্টিকটাও প্রায় ছিঁড়ে গেছে। ভেতরে ভাঙা কাঠের ওপর পড়ে আছে দীর্ঘদিনের পুরোনো পোশাক। যাকে একটি ঘর বলাও মুশকিল।
মুক্তিযোদ্ধা ফজলুর রহমানের প্রতিবেশী লোকমান হাকিম বলেন, ফজলুর রহমান এক ছেলে ও তিন মেয়ে রেখে গেছেন। অভাবের কারণে তার ছেলেও ঘরটি মেরামত করতে পারেননি। জীবিকার তাগিদে ছেলে শফিকুল ইসলাম তার মাকে নিয়ে চট্টগ্রামে থাকছেন। সেখানে প্রাইভেট টিউশনি করে জীবন চালাচ্ছেন।
তিনি বলেন, সরকার অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য দোতলা ঘর তৈরি করে দিচ্ছে। তবে তালিকায় নাম উঠলেও ঘর পাননি ফজলুর রহমানের পরিবার।
আরেক প্রতিবেশী আবু সাইদ বলেন, উপজেলার মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে সবচেয়ে অবহেলিত ও গরিব পরিবারগুলোর মধ্যে অন্যতম ফজলুর রহমানের পরিবারটি। তবু কেন সরকারের কর্মকর্তাদের নজরে আসছে না বিষয়টি?
বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলুর রহমানের ছোট মেয়ে সেলিনা আক্তার বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধাদের ঘর বিতরণ তালিকা প্রণয়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কঠোর নির্দেশনা রয়েছে। এরপরও আমার বাবার নামটি তালিকায় স্থান পেয়েও কী কারণে বাদ পড়েছে, তা জানি না।’
জেলা প্রশাসক আবু আলী মো. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, নাজিরপুরে ৪৫০ জন মুক্তিযোদ্ধা রয়েছেন। একসঙ্গে সবাইকে ঘর দেয়া সম্ভব নয়। মাত্র ছয় ভাগ মুক্তিযোদ্ধাকে ঘর দেয়া সম্ভব হয়েছে। তবে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য পরবর্তী ঘর বরাদ্দ এলেই তাকে প্রথমেই দেয়া হবে।

Comment here