কাউখালী

কাউখালীতে রাতের আঁধারে বিদ্যালয়ের শতবর্ষী পুকুর দখলের চেষ্টা

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
প্রশাসনের বাধা উপেক্ষা করে রাতের আঁধারে বালু ফেলে পিরোজপুরের কাউখালী সরকারি বালক মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শতবর্ষী একটি পুকুর দখল চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে।

জানা যায়, বিদ্যালয়টিতে দুইটি পুকুর ছিল। ছাত্ররা ওই পুকুর দুইটিতে গোসলসহ স্থানীয়রা তাদের পানির চাহিদা মেটাতেন। প্রায় ১৫ বছর আগে বিদ্যালয়ের সামনের পুকুরটি ভরাট করা হয়। এতে ওই বিদ্যালয়ের ছাত্রসহ স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেক অসুবিধার সৃষ্টি হয়। বাকি পুকুরটির দিকেও নজর পড়ে স্থানীয় রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের। বারবার দখলের চেষ্টা করেও বিদ্যালয়ের পেছনে থাকা পুকুরটি দখলে ব্যর্থ হয়। কিন্তু শুক্রবার রাতের আঁধারে পুকুরটি ভরাট করার কাজ শুরু হয়।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পুকুরটিতে ড্রেজারের মাধ্যমে বালু ভরাট করায় পুকুরের পুরো পানি ঘোলা হয়ে গেছে। পুকুরের পানি উপচে পড়ছে। সেখানে বালু দেওয়ার কাজে ব্যবহৃত পাইপও পড়ে রয়েছে।

উপজেলা সদরের একাধিক ব্যবসায়ীসহ ওই বিদ্যালয় সংলগ্ন বাসিন্দারা জানান, পুকুরটির পানি স্থানীয়রা রান্নাসহ গোসলের কাজে ব্যবহার করে। তাছাড়া ওই বিদ্যালয় সংলগ্ন থাকা দেড় শতাধিক দোকান-পাটে অগ্নিকাণ্ডের মতো দুর্ঘটনায় প্রয়োজনীয় পানির একমাত্র উৎস ছিল পুকুরটি। পুকুরটি ভরাট হলে বিদ্যালয়টির ঐতিহ্য হারানোসহ বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হবে এলাকাবাসী। তাছাড়া পুকুরটি দখল হলে স্থানীয় পরিবেশের বিপর্যয় ঘটবে।

ওই বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বাবর আলী তালুকদার বলেন, রাতের আঁধারে স্থানীয় প্রভাবশালীরা বিদ্যালয়ের শতবর্ষী পুকুরটি দখলের চেষ্টায় ভরাট করছেন। পুকুরে শিক্ষকদের নিজস্ব তহবিল থেকে প্রায় এক লাখ টাকার মাছ ছাড়া হয়েছিল। যা গত এক বছরে ধরা হয়নি। এ ব্যাপারে আমি অসহায় হয়ে আমার বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির দায়িত্বে থাকা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানিয়েছি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক ব্যক্তি বলেন, ভাই নাম প্রকাশ না করলে দখল কাজে জড়িতদের নাম বলতে পারি। আমি বলছি এমন কথা জানতে পারলে তারা আমাদের প্রাণে শেষ করে দেবে। দখল কাজে জড়িতরা স্থানীয় প্রভাবশালী হওয়ায় স্থানীয়রা কেউই দখল কাজে অভিযুক্তদের নাম প্রকাশ করতে চায় না। তবে যতদূর জানা যায়, স্থানীয় দুইজন জনপ্রতিনিধিসহ তিনজন দখলের চেষ্টা ও ভরাট কাজের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন।

এ ব্যাপারে উপজেলা চেয়ারম্যান আবু সাইয়্যিদ মনুর সঙ্গে মোবাইলে কথা হলে তিনি বলেন, পুকুরটিতে প্রচুর ময়লা থাকায় তা নিষ্কাশনের চেষ্টা চলছে। রাতের আঁধারে কেন এ কাজ চলছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক স্থানীয় প্রভাবশালী হওয়ায় তিনি বিদ্যালয়ের টাকা ব্যাপকভাবে লুটপাট করছেন। তাছাড়া তিনি স্থানীয় রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। এসব বিষয় নিয়ে নিউজ করেন। পুকুর ভরাটের বিষয় নিয়ে নিউজ করা লাগবে না।

সদর ইউপি চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা আমিনুল হোসেন মিল্টনের মোবাইলে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।

ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক নাহিদ ফারজান ছিদ্দিকী  বলেন, বিষয়টি শুনে ওই রাতে সেখানে ভ্রাম্যমাণ আদালত পাঠানো হয়েছিল। তবে সেখানে কাউকে পাওয়া যায়নি।

বিদ্যালয়টির ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খালেদা খাতুন রেখা বলেন, শুক্রবার রাতে স্থানীয় প্রভাবশালীরা পুকুরটি ড্রেজারের মাধ্যমে বালু দিয়ে ভরাট করেছে। এমন খবর শুনে সেখানে গিয়ে কাজ বন্ধ করে দেই। কিন্তু আমি চলে আসার পর ভোর রাতে আবার সেখানে বালু দিয়ে ভরাটের কাজ চলে। কারা কী কারণে ভরাট করছে তা কিছুই জানি না। আমি এমন অন্যায়ের ব্যাপারে প্রতিবাদ করতে গিয়ে পুরো অসহায় হয়ে পড়েছি।

Comment here