পিরোজপুর সদর

এ কে এম এ আউয়ালকে কারাগারে পাঠানোয় বিচারককে বদলি করা হয়নি: আইনমন্ত্রী

অনলাইন ডেস্কঃ
দুদকের মামলায় পিরোজপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক এমপি এ কে এম এ আউয়াল ও তাঁর স্ত্রী লায়লা পারভীনকে কারাগারে পাঠানোর পর জেলা ও দায়রা জজ মো. আবদুল মান্নানকে বদলির ঘটনায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।
এ কে এম এ আউয়ালকে কারাগারে পাঠানোর ঘটনায় মুহূর্তেই আদালত পাড়াসহ পুরো শহরে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এ অবস্থায় পিরোজপুর শহরসহ জেলার, মঠবাড়িয়ায় সব দোকান ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। নেতাকর্মীরা সড়কের বেশ কয়েকটি স্থানে অগ্নিসংযোগ করায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। শহরের গোপাল কৃষ্ণ টাউন ক্লাব সড়কে প্রতিবাদ মিছিল করে আউয়ালের অনুসারীরা।
পিরোজপুর জেলা আইনজীবীদের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, এ কে এম এ আউয়াল ও তার স্ত্রীর লায়লা পারভিন এর বিরুদ্ধে ফৌজদারি অপরাধ না থাকার পরেও তাদের জামিন না দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এ কারণেই বিচারককে বদলী করা হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় দেওয়া ওই আদেশের ঘণ্টাখানেক পর বিচারক আবদুল মান্নানকে বদলি করা হয়।
তবে, আইনমন্ত্রণালয় বলছে, সাবেক এমপিকে কারাগারে পাঠানোর কারণে বিচারককে বদলি করা হয়নি। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ থাকায় অনেক আগে থেকেই প্রক্রিয়া শুরু হয়। সে অনুযায়ী তাকে মন্ত্রণালয়ে সংযুক্তি করতে সুপ্রিমকোর্টের কাছে নথি পাঠানো হয়। সে অনুযায়ী তাকে মন্ত্রণালয়ে সংযুক্তি করা হয়েছে।
এদিকে, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক জানিয়েছেন, আউয়ালকে কারাগারে পাঠানোর কারণে বিচারককে তাৎক্ষণিক বদলি করা হয়নি। এর বেশি আর কিছু বলতে অপারগতা প্রকাশ করে বলেন, আমি নিরপেক্ষ থাকতে চাই। বিচারকের বদলি প্রশাসনিক বিষয়। বিষয়টি না দেখে আর কোন বক্তব্যে দেবেন না বলে জানান তিনি।
পৃথক তিনটি মামলায় হাইকোর্টের দেওয়া আট সপ্তাহের আগাম জামিন শেষে আউয়াল ও তার স্ত্রী লায়লা পারভীন একটি মামলায় পিরোজপুর জেলা ও দায়রা জজ আদালতে হাজির হয়ে জামিনের আবেদন করেন। শুনানি শেষে বিচারক মো. আবদুল মান্নান জামিন না মঞ্জুর কারে তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। তখনই আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা বিক্ষোভে ফেটে পড়েন।

এর কিছুক্ষণ পর জেলা ও দায়রা জজ আবদুল মান্নান ছুটিতে চলে গিয়ে যুগ্ম ও জেলা জজ নাহিদ নাসরিনের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করেন। বিকেল পৌনে চারটার দিকে আউয়াল ও লায়লা পারভীনের আইনজীবীরা ভারপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ নাহিদ নাসরিনের কাছে জামিনের আবেদন করেন। শুনানি শেষে বিকেল চারটার দিকে বিচারক দুইজনের জামিনের আবেদন মঞ্জুর করেন।
উল্লেখ্য, গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর দুর্নীতি দমন কমিশনের বরিশাল সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে দুদকের প্রধান কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. আলী আকবর বাদী হয়ে আউয়ালের বিরুদ্ধে খাসজমিতে ভবন নির্মাণ, অর্পিত সম্পত্তি ও পুকুর দখলের অভিযোগে তিনটি মামলা করেন। একটি মামলায় আউয়ালের সঙ্গে তাঁর স্ত্রী পিরোজপুর জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী লায়লা পারভীনকেও আসামি করা হয়েছে।
গত ৭ জানুয়ারি আউয়াল ও লায়লা পারভীন হাইকোর্ট থেকে আট সপ্তাহের অন্তর্বর্তী জামিন নেন। মঙ্গলবার ওই জামিনের মেয়াদ শেষ হলে তাঁরা পিরোজপুর জেলা ও দায়রা জজ আদালতে হাজির হয়ে জামিনের আবেদন করেন।
দুদকের বরিশাল সমন্বিত জেলা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, তিনটি মামলার মধ্যে প্রথম মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে এ কে এম এ আউয়াল ও তাঁর স্ত্রী লায়লা পারভীন প্রভাব খাটিয়ে নাজিরপুর উপজেলার বুইছাকাঠি মৌজায় দশমিক ০৩ একর খাসজমি বেনামে বন্দোবস্ত নেন।
পরে ওই জমিতে দ্বিতল ভবন নির্মাণ করে ভাড়া দেন। এ ঘটনায় আউয়াল ও তাঁর স্ত্রী লায়লা পারভীনকে আসামি করা হয়। অপর দুই মামলায় শুধু আউয়ালকে আসামি করা হয়। ওই দুই মামলায় বলা হয়েছে, পিরোজপুর পৌরসভার খুমুরিয়া মৌজায় রাজার পুকুর নামে পরিচিত হিন্দুদের ও অর্পিত সম্পত্তির ৪৪ শতাংশ জমি দখল করে চারপাশে দেয়াল নির্মাণ করেন আউয়াল।
এছাড়া নেছারাবাদ উপজেলার স্বরূপকাঠি মৌজায় দশমিক ০৫ একর অর্পিত সম্পত্তি বন্দোবস্ত নিয়ে শর্ত ভঙ্গ করে আউয়াল ফাউন্ডেশনের নামে দ্বিতল ভবন করেন আউয়াল।
আউয়াল ২০০৮ ও ২০১৪ সালে পরপর দুইবার পিরোজপুর-১ (সদর-নাজিরপুর-নেছারাবাদ) আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংসদ সদস্য হন।

Comment here