জাতীয়

বালিশকাণ্ডে ৩৪ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে: গণপূর্তমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক:
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পে নজিরবিহীন ‘বালিশ দুর্নীতি’র ঘটনায় গণপূর্ত অধিদপ্তরের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী, দু’জন অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী, প্রকল্প পরিচালকসহ ৩৪ কর্মকর্তাকে দায়ী করে তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। বুধবার সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তদন্ত প্রতিবেদনের সারসংক্ষেপ তুলে ধরেন গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী শ. ম. রেজাউল করিম। তিনি দায়ীদের নামও প্রকাশ করেন।

মন্ত্রী বলেন, তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে দায়ী তিন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অভিযুক্ত ৩৪ জনের মধ্যে চারজন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানানো হয়েছে। এ ছাড়া গণপূর্ত অধিদপ্তরের একজনকে দায়মুক্তি দেওয়া হয়েছে। কারণ চাকরির প্রথম দিনে না বুঝে তিনি ওই ফাইলে স্বাক্ষর করেছিলেন। দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রথম মেগা প্রকল্প রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে বিছানা, বালিশ, আসবাবপত্র কেনা ও তা ভবনে তোলায় লাগামছাড়া দুর্নীতির খবর গণমাধ্যমে প্রকাশ হয় গত মে মাসে। একটি বালিশের পেছনে ব্যয় দেখানো হয় ছয় হাজার ৭১৭ টাকা। এর মধ্যে এর দাম পাঁচ হাজার ৯৫৭ টাকা আর সেই বালিশ নিচ থেকে ফ্ল্যাটে ওঠাতে খরচ হয় ৭৬০ টাকা। এ নিয়ে দেশজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হলে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে পৃথক দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। দুটি কমিটির রিপোর্টে অনিয়ম এবং দুর্নীতির সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ৩৪ জনের জড়িত থাকার বিষয় উঠে আসে। মন্ত্রী বলেন, গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীন দপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে কয়েকজন এরই মধ্যে অবসরে গেছেন। তিনজন অবসরকালীন ছুটিতে আছেন। তাদের ক্ষেত্রেও আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

শ. ম. রেজাউল করিম বলেন, যারা চাকরিতে আছেন গুরুতর অভিযোগের কারণে তাদের ১৬ জনকে সাময়িক বরখাস্ত করে বিভাগীয় মামলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। অপর ১০ জনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা দায়েরের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিভাগীয় মামলার পর তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তিনি আরও বলেন, তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী তিন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এ ঘটনায় সম্পৃক্ত। তারা ৩৬ কোটি ৪০ লাখ নয় হাজার টাকা অতিরিক্ত নিয়েছেন। সে টাকা উদ্ধারের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তাদের অন্য কাজের বিল পাওনা রয়েছে। সেখানে থেকে এ টাকা কেটে রাখা হবে। রাষ্ট্রের একটি টাকাও কেউ অন্যায়ভাবে হজম করতে পারবে না।

দুর্নীতিতে জড়িত যারা : রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রকল্প পরিচালক ড. শওকত আকবর, উপ-প্রকল্প পরিচালক হাসিনুর রহমান, উপ-সহকারী প্রকৌশলী মেহেদী হাসান ও মো. মাহবুব। এ চারজন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা। অন্যরা হলেন পাবনা গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ মাসুদুল আলম, উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী তাহাজ্জুদ হোসেন, উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মোস্তফা কামাল, আহম্মেদ সাজ্জাদ খান, মো. তারেক, সহকারী প্রকৌশলী রুবেল হোসাইন ও আমিনুল ইসলাম, উপ-সহকারী প্রকৌশলী ফজলে হক, সুমন কুমার নন্দী, মো. রফিকুজ্জামান, জাহিদুল কবীর, মো. শাহীন উদ্দিন, আবু সাঈদ, শফিকুল ইসলাম ও রওশন আলী। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করে বিভাগীয় মামলা দায়েরের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।

এ ছাড়া গণপূর্ত বিভাগের রাজশাহী সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (সিভিল) এ কে এম জিল্লুর রহমানের বিরুদ্ধে দরপত্র আহ্বানের আগে মালপত্র গ্রহণের গুরুতর অভিযোগ পাওয়ায় তাকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করে বিভাগীয় মামলা দায়েরের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ ছাড়া যে ১০ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলার সিদ্ধান্ত হয়েছে তারা হলেন- পাবনার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী দেবাশীষ চন্দ্র সাহা, রাজশাহী গণপূর্ত সার্কেলের উপ-সহকারী প্রকৌশলী খন্দকার মো. আহসানুল হক, খোরশেদা ইয়াছরিবা, পাবনা গণপূর্তের উপ-সহকারী প্রকৌশলী সুমন কুমার নন্দী, রাজশাহী গণপূর্ত জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী নজিবর রহমান, উপ-সহকারী প্রকৌশলী আলমগীর হোসেন, মোসা. শাহনাজ আক্তার, নির্বাহী প্রকৌশলী তানজিলা শারমিন, আশরাফুল ইসলাম ও উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. শফিউজ্জামান।

তদন্তে দোষীসাব্যস্ত হওয়া কর্মকর্তাদের মধ্যে অবসরে গেছেন রাজশাহী গণপূর্ত জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী শফিকুর রহমান। অবসরকালীন ছুটিতে আছেন রাজশাহী গণপূর্ত জোনের সহকারী প্রকৌশলী মকলেছুর রহমান, নির্বাহী প্রকৌশলী নুরুল ইসলাম এবং গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম।

অন্যদিকে পাবনা গণপূর্ত সার্কেলের সহকারী প্রকৌশলী (সিভিল) রকিবুল ইসলামকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। তিনি ২০১৮ সালের ২০ সেপ্টেম্বর পাবনা গণপূর্ত সার্কেলে যোগ দেন। ওই দিন ছিল তার প্রথম কর্মদিবস। পিডব্লিউডির রেট সিডিউল এবং অ্যানালাইসিস সম্পর্কে তার স্পষ্ট ধারণা ছিল না। এর পরও রীতি অনুযায়ী তিনি প্রথম কর্মদিবসে স্বাক্ষর করেছেন। তার বিষয়টি সহানুভূতির দৃষ্টিতে দেখা যেতে পারে বলে কমিটি সুপারিশ করেছে। অত্যন্ত নবীন কর্মকর্তা বিবেচনায় তাকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।

Comment here