জাতীয়

নৌ ধর্মঘট স্থগিত

নিজস্ব প্রতিবেদক:
নৌযান শ্রমিকদের ধর্মঘট স্থগিত করা হয়েছে। যাত্রীদের ভোগান্তি এবং দেশের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে ধর্মঘট আহ্বানকারী দুই সংগঠনের নেতারা জানিয়েছেন।

১১ দফা দাবি বাস্তবায়নে মঙ্গলবার রাত ১২টা ১ মিনিট থেকে সারাদেশে নৌচলাচল বন্ধ রাখার ঘোষণা দেয় বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশন এবং বাংলাদেশ জাহাজী শ্রমিক ফেডারেশন।

এ অবস্থায় বুধবার বিকেলে শ্রম অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের সঙ্গে বৈঠক করেন ফেডারেশন নেতারা। বৈঠকে ধর্মঘট সাময়িক স্থগিতের সিদ্ধান্ত হলে সব রুটে বিকেল সাড়ে ৪টা থেকে নৌযান চলাচল শুরু হয়।

রাজধানীর মতিঝিলে শ্রম অধিদপ্তরে এই বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কেএম মিজানুর রহমান। বৈঠকে শ্রমিক নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি শাহ আলম ভূঁইয়া, সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী আশিকুল আলম, সাংগঠনিক সম্পাদক আফসার হোসেন চৌধুরী প্রমুখ।

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, শ্রমিকদের দাবিদাওয়া নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হলেও শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান দেশের বাইরে থাকায় কোনো সিদ্ধান্তে আসা সম্ভব হয়নি। তবে ঈদ সামনে রেখে জনজীবনে দুর্ভোগের কথা বিবেচনায় আপাতত ধর্মঘট স্থগিতের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। প্রতিমন্ত্রী দেশে ফিরলে আগামী ৩০ আগস্ট এ বিষয়ে পরবর্তী বৈঠকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা আকতারুল ইসলাম এবং বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী আশিকুল ধর্মঘট কর্মসূচি স্থগিত করার তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

বাংলাদেশ জাহাজী শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি শুক্কুর মাহমুদ বলেন, দেশে বন্যা চলছে। শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রীও দেশের বাইরে। যাত্রীদের দুর্ভোগ আর দেশের বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনা করে পণ্যবাহী নৌযান শ্রমিকদের ধর্মঘটও স্থগিত করা হলো।

ঢাকার সদরঘাটে বিআইডব্লিউটিএর যুগ্ম পরিচালক আলমগীর কবির বলেন, ধর্মঘট স্থগিতের খবর পেয়েছেন তারা। তবে সদরঘাটে এখনও খুব বেশি লঞ্চ ভেড়েনি। এখন ধর্মঘট উঠে গেলেও যাত্রী খুব বেশি আসবে না। বৃহস্পতিবার থেকে লঞ্চ চলাচল স্বাভাবিক হবে।

অনির্দিষ্টকালের এই ধর্মঘট শুরু হলে ৪৩টি নৌপথে যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। তীব্র ভোগান্তিতে পড়েন দক্ষিণ জনপদের বিভিন্ন জেলার নৌপথের যাত্রীরা। ধর্মঘটের কারণে সারাদেশে লাইটার জাহাজ (ছোট আকারের পণ্যবাহী জাহাজ) চলাচলও বুধবার দিনভর বন্ধ ছিল। ফলে চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে মাদার ভেসেল (বড় আকারের জাহাজ) থেকে পণ্য খালাসও বন্ধ থাকে।

ফেডারেশনের ১১ দফা দাবির মধ্যে মালিক পক্ষের কাছে সাত দফা এবং সরকারের কাছে চার দফা দাবি রয়েছে। এগুলো হলো- নৌশ্রমিকদের নিয়োগপত্র প্রদান, বেতন-ভাতা বৃদ্ধি, অভ্যন্তরীণ রুটে সন্ত্রাস-চাঁদাবাজি এবং শ্রমিক নির্যাতন বন্ধ ও নৌসন্ত্রাসীদের গ্রেফতার, নৌযান শ্রমিকদের সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং কর্মস্থলে দুর্ঘটনায় নিহত নৌশ্রমিকদের পরিবারকে ১০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ প্রদান।

মালিকদের অঘোষিত ধর্মঘট শুরু: বরিশাল ব্যুরো জানায়, নৌযান শ্রমিকরা ধর্মঘট স্থগিত করলেও মালিকরা অঘোষিত ধর্মঘট শুরু করেছেন। বৃহস্পতিবার নৌযান মালিকরা ঢাকায় জরুরি সভা করে নতুন করে সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানিয়েছেন লঞ্চ মালিকরা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে লঞ্চ মালিকদের সংগঠন অভ্যন্তরীণ নৌযান পরিবহন সংস্থার সভাপতি মাহবুব উদ্দিন আহম্মেদ সমকালকে বলেন, ধর্মঘটি শ্রমিকরা গতকাল সকালে ঢাকা সদরঘাটের সব লঞ্চ পন্টুন থেকে সরিয়ে বুড়িগঙ্গার বিপরীত দিকে রাখেন। এ বিষয়ে মালিকদের অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজনও মনে করেননি তারা।

তিনি বলেণ, নৌযান মালিকরা শ্রমিকদের এ ধৃষ্টতা ভালোভাবে নেননি। তাই তারা বুধবার সব নৌযান চলাচল বন্ধ রেখেছেন। ফলে রাতে ঢাকা সদরঘাট থেকে কোনো লঞ্চ বরিশাল তথা দক্ষিণাঞ্চলের উদ্দেশে ছাড়েনি। আবার বরিশাল নৌবন্দর থেকে রাতে পাঁচটি লঞ্চ ঢাকা যাওয়ার কথা থাকলেও তিনটিই ছাড়েনি। কীর্তনখোলা- ১০ ও ফারহান নামক দুটি লঞ্চ যাত্রী নিয়ে ঢাকায় রওনা হয়েছে।

সংগঠনের অপর সদস্য ঢাকা-বরিশাল রুটের সুন্দরবন লঞ্চের স্বত্বাধিকারী সাইদুর রহমান রিন্টু জানান, যাত্রীবাহী ও পণ্যবাহী সব নৌযানের মালিকরা বৃহস্পতিবার ঢাকায় জরুরি সভা করবেন। এ সভায় নৌযান চলাচলের বিষয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবেন।

Comment here