বিশেষ প্রতিবেদন

পিরোজপুর শহরসহ গ্রামাঞ্চলে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধের নির্দেশনা উপেক্ষিতঃ হাট-বাজার ও ব্যাংকগুলোতে বাড়ছে জনসমাগম

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
পিরোজপুর শহরসহ গ্রামাঞ্চলে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এড়াতে ঘরে থাকার নির্দেশনা থাকলেও জেলা-উপজেলার প্রতিটি হাট-বাজারে ঠেকানো যাচ্ছে না জনসমাগম। ব্যাংকগুলোতে বাড়ছে মানুষের ভিড়। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বাজারের দোকান গুলোতে বাড়ছে জনসমাগম। প্রতিটি রাস্তা ঘাটেও বাড়ছে মানুষের চলাচল। অযতা বাজারের দোকানে লোক জমায়েত হয়ে দিচ্ছে আড্ডা। মোটরসাইকেল থেকে শুরু করে অবাধে চলছে ছোট বড় যানবাহন। তবে,জেলা-উপজেলার বাজারগুলো ও রাস্তা ঘাটে ভিড় কমাতে এবং করোনার ভাইরাস এড়াতে সমাগম না করে জনগণকে নিজ নিজ ঘরে থাকার অভিরাম প্রচারনা চালাচ্ছে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন। এক শ্রেনীর অসেচতন মানুষ করোনা ভাইরাস সংক্রামনকে আমলে না নিয়ে লকডাউন মানছেনা। ফলে জেলায় ভয়াবহ পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হবে বলে আশংকা করছেন অনেকেই। এইদিকে আজ সোমাবার জেলা প্রশাসন ও জেলা ব্যবসায়ী সমিতি ওষুধের দোকান ব্যাতিত অন্যান্য সব দোকান ৫টার পর বন্ধ থাকার নির্দেশ দিয়েছে।

করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে এবং সংক্রমণ রোধে ঘরে থাকা এবং সামজিক দুরত্ব বজায় রেখে চলাচলের যে সরকারি নির্দেশনা দেয়া হয়েছে তা পিরোজপুরের গ্রামাঞ্চলে লোকজন উপেক্ষা করে নিয়মিত জীবন-যাপন করছে। এতে করে পিরোজপুর জেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের গ্রামাঞ্চলে করোনা ভাইরাসের কমিউনিটি ট্রান্সমিশনের ঘটনা ঘটতে পারে বলে মনে করছে স্থানীয় বিশ্লেষকরা।
পিরোজপুর জেলা পরিবেশ আন্দোলনের সভাপতি এ্যাড. শহিদুল্লাহ খান জানান, বিশ্বে করোনা ভাইরাসে আক্রমনের পরপরই পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে বাংলাদেশে অনেক মানুষ এসেছে। পিরোজপুরেও চীন, ইতালি, ফ্রান্স, সৌদি আরব, দুবাই, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য থেকে প্রায় ২ হাজার প্রবাসী এসেছে। কিন্তু এর ভিতরে প্রশাসনের হিসাব অনুযায়ী হোম কোয়ারেন্টাইন বা কোয়ারেন্টাইনে আছে মাত্র ৪৫৯ জন। এছাড়া অনেক প্রবাসীই আছে প্রশাসনের নজরের বাইরে। এদিকে গত ২৬ মার্চ সরকারি বন্ধ ঘোষনার পরপরই পিরোজপুর জেলায় ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী সহ দেশের বিভিন্ন বিভাগীয় শহর থেকে প্রচুর মানুষ গ্রামের বাড়িতে এসেছে। তবে তারা প্রায় সকলেই করোনা ভাইরাস প্রতিরোধের সরকার ও স্বাস্থ্য বিভাগ যে নিদের্শনা দিয়েছে তা মানছে না। স্থানীয় হাট-বাজার এবং চায়ের দোকানে সামাজিক দুরত্ব বজায় না রেখেই নিয়মিত চলাচল করছে। শিশুরা ঘরে না থেকে মাঠে খেলাধুলা ও দোকানে আড্ডা দিচ্ছে।

এ্যাড. শহিদুল্লাহ খান আরো জানান, বিদেশ ও দেশের বিভিন্ন স্থানের লোকজন গ্রামের অবস্থান করায় এবং করোনা ভাইরাস প্রতিরোধের নির্দেশনা গুলো উপেক্ষা করায় এ ভাইরাসের কমিউনিটি টান্সমিশন ঘটতে পারে। যা পিরোজপুর সহ দেশের মানুষের ভয়াবহ পরিনতি হতে পারে।
জানা যায়, পিরোজপুর শহরের সিও অফিস মোড় থাকে মানুষের উপচেপড়া ভিড়। রাত ৯টার পরেও গিয়ে দেখা গেছে এখানে প্রচুর মানুষের সমাগম। সিও অফিস মোড়ের রাস্তার পাশে সরকারী জায়গায় অবৈধভাবে গড়ে ওঠা সান্ধ্য বাজারকে কেন্দ্র করে এখানে মানুষের ভিড় লেগেই রয়েছে। সড়ক বিভাগের জায়গায় গড়ে ওঠা এ বাজারটি বিভিন্ন ভেঙ্গে ফেলা হলেও তা ধীরে ধীরে আবার আগের রূপে ফিরে আসে। এছাড়া শহরের বড় বাজারে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত থাকে ক্রেতাদের ভিড়। ব্যাংক পাড়ায়ও লোকে লোকারণ্য থাকে।
ইন্দুরকানী উপজেলার ঘোষেরহাট বাজারে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে ও সচেতনতার জন্য গণমাজায়াত নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে সুপারি বাগানে সাপ্তাহিক বাজার বসে বেচাকেনা করা হচ্ছে। বাজারে বিক্রেতারা নির্ধারিত স্থানে বসতে না পেরে বাজার সংলগ্ন সুপারি বাগানে বসে বেচাকেনা করছে। এখানে বাজারে ভিতরে শাক সবজি,মাছ সহ বিভিন্ন প্রকারে মনোহরি দোকান দেখতে পাওয়া যায়। ভান্ডারিয়া উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারেও মানুষের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে।
নাজিরপুর উপজেলার বৈঠাকাটা বাজার নিয়ে স্থানীয়রা করোনা আতংকে রয়েছেন। উপজেলার এ বাজারে সপ্তাহে শনি ও মঙ্গলবার নিয়মিত হাট বসে। দুর দুরান্ত থেকে মানুষ এখানে পাইকারী এ হাটে আসেন। বিশেষ করে তরমুজের হাটে দেশে সবচেয়ে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত মাদারীপুর জেলা থেকে পাইকাররা তরমুজ কিনতে আসে এখানে। যা সংশ্লিষ্ট এলাকার মানুষের জন্য খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। এমতাবস্থায় কলারদোয়ানিয়া তথা নাজিরপুর উপজেলার স্বার্থে জরুরী ভিক্তিতে বৈঠাকাটা বাজারের হাট বন্ধ করা প্রয়োজন। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার জন্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন এলাকাবাসি। সচেতন মহল বলছেন, সরকারের নির্দেশনা না মেনে নিজের সর্বনাশ নিজেই ঢেকে আনছে এখানকার সাধারণ মানুষ।

এ বিষয়ে পিরোজপুরের সিভিল সার্জন ডা. মো: হাসনাত ইউসুফ জাকী বলেন, স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে করোনা প্রতিরোধের জন্য বিভিন্ন দিক নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে। গ্রামের এলাকায় মানুষের মাঝে আতঙ্ক না থাকারা কারণেই তারা তেমন সেটা মানছে না। আর করোনা ভাইরাসে যারা এখন পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছে তাদের মাঝে তেমন কমিউনিটি ট্রান্সমিশন হয়নি। তাই পিরোজপুরে গ্রামাঞ্চলে বর্তমানে করোনা ভাইরাসের কমিউনিটি ট্রান্সমিশন তেমন ঝুঁকি নাই।

পিরোজপুরের পুলিশ সুপার হায়াতুল ইসালাম খান জানান, করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে পুলিশ প্রশাসন দিন-রাত কাজ করে যাচ্ছে। শহরের মানুষ সোস্যাল মিডিয়ায় এবং অন্য সব মিডিয়ার বেশি খোঁজ-খবর রাখে বিধায় তারা সরকারি নিদের্শনা মেনে চলছে এবং শহরের দোকান-পাট বন্ধের জন্য পুলিশের নিয়মিত টহল চলছে। এছাড়াও বিদেশ থেকে আসা প্রবাসীদের হোম কোয়ারেন্টাইন বা কোয়ারেন্টাইনে থাকার বিষয়ে নজরধারী করেছে। গ্রাম এলাকায় রাস্তাঘাট ও যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো না থাকার কারণে অনেক সময় মানুষ জমায়েত হচ্ছে তা তাদের কাছ খবর আসে না। তবে এখন গ্রাম এলাকার হাট-বাজারে পুলিশের টহল বৃদ্ধি করা হবে।

পিরোজপুরের জেলা প্রশাসক আবু আলী মো: সাজ্জাদ হোসেন জানান, পিরোজপুরে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে প্রশাসনের সকল স্তরে সমান ভাবে কাজ করছে এবং জণগণকে সচেতন করতে শহরের এবং গ্রামাঞ্চলে প্রচারণা ও সচেতনতা মূলক মাইকিং করছে। সেনাবাহিনী মানুষের সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে বিভিন্ন এলাকায় প্রচারনা চালাচ্ছে। এছাড়া জেলা প্রশাসনের ও সরকারি নিদের্শ উপেক্ষাকারীদের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমান আদালত কাজ করছে।

Comment here