অমানবিক!বিশেষ প্রতিবেদন

দুঃখী মানুষের মানচিত্রে সুমতি আর সরলার বাড়িতে ইউএনও ও এ্যাসিল্যান্ডঃ দিলেন প্রধানমন্ত্রীর খাদ্য উপহার

বিশেষ প্রতিবেদকঃ
দুঃখী মানুষের মানচিত্রে সুমতি আর সরলার বাড়িতে মঠবাড়িয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উর্মী ভৌমিক ও সহকারি কমিশনার (ভূমি) রিপন বিশ্বাস মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর খাদ্য উপহার পৌঁছে দেন।
বৃহস্পতিবার মঠবাড়িয়ার বড়শৌলা গ্রামের অশীতিপর বিধবা বৃদ্ধা সুমতি মণ্ডল ও সত্তোরোর্ধ বিধবা সরলা হালদার কে নিয়ে ‘দুঃখী মানুষের মানচিত্র’সুমতি সরলাদের নিরন্ন কাল লিখেছিলেন সাংবাদিক দেবদাস মজুমদার। এ মানবিক বিষয়টি উপজেলা প্রশাসনের নজরে আসে। শুক্রবার দুপুরে এ দুই বৃদ্ধার বাড়িতে মঠবাড়িয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উর্মী ভৌমিক ও সহকারি কমিশনার (ভূমি) রিপন বিশ্বাস মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর খাদ্য উপহার এ দুই বৃদ্ধার বাড়িতে পৌঁছে দেন। এসময় ইউএনও উর্মী ভৌমিক এ দুই বৃদ্ধার বয়স্ক ভাতার তালিকায় নাম অন্তর্ভূক্তির বিষয়টি দ্রুত নিশ্চিত করণে তাদের আশ্বাস দিয়েছেন। অসহায় দুই বিধবা বৃদ্ধার প্রতি এমন মহতী মানবিক সহায়তার জন্য ইউএনও ও এসিল্যাণ্ড মহোদয়ের প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা জানান দেবদাস মজুমদারসহ আরো অনেকেই।
সাংবাদিক দেবদাস মজুমদার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেছিলেনঃ-“দুঃখী মানুষের মানচিত্র-সুমতি সরলাদের নিরন্ন কাল”
সুমতি আর সরলা। অতিদরিদ্র দুই বিধবা বৃদ্ধা। সুমতি রানী মণ্ডল অশীতিপর। আর সরলা রানী হালদার সত্তোরোর্ধ বয়সী। এই দুই অসহায় বৃদ্ধার বাড়ি পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার বড় শৌলা গ্রামে। বৃদ্ধা সুমতির স্বামী বিজেন্দ্র নাথ মণ্ডল আর বৃদ্ধা সরলার স্বামী নকুল চন্দ্র হালদার ১০/১২ বছর আগে মারা যান। এরা পেশায় ছিলেন কৃষি শ্রমিক। আমাদের মঠবাড়িয়ার মিরুখালী ইউনিয়নের বড়শৌলা গ্রামের কৃষিজমিতে বছরজুড়ে জলাবদ্ধতায় তিন ফসলী জমি এক ফসলী হয়ে যায়। সুমতি আর সরলাদের নিরন্নের কাল নামে। সেই সাথে পুরো গ্রামের কৃষক পরিবারগুলোর অবস্থা ফসলহানীতে খাদ্য সংকটে। আজও বড়শৌলা গ্রামের অবস্থা বদলায়নি।

বিধবা বৃদ্ধা সুমতি আর সরলা স্বামীর মৃত্যুর পর বিধবা ভাতার জন্য টানা দশ বছর চেষ্টা করেছেন। চেষ্টা করেছেন বৃদ্ধ ভাতার জন্যও। ওসব তাদের ভাগ্যে জোটেনা। এলাকার মেম্বর পয়সা ছাড়া তালিকায় নাম উঠনো ভাবতেই পারেনা। সুমতি সরলাদের বেঁচে থাকার স্বপ্ন কেবলিই মরে যায়।
করোনা সংকটের পর অসহায় দুই বৃদ্ধার ঘরবন্দী জীবনে নিরন্নের কাল নামে। কেউ খোঁজও রাখেনা। আজও এই দুই বিধবার ভাগ্যে কোনও ত্রাণ মেলেনা। স্থানীয় নারী ইউপি সদস্যের হাতে পায় ধরে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপহার ৩০ কেজি চাল আর ২ হাজার ৫০০ টাকার সহায়তার তালিকায় নাম উঠেছিলো। কিন্তু স্থানীয় পুরুষ ইউপি মেম্বর আব্দুল লতিফ খান ওই নাম গোপনে কেটে তালিকা দিয়ে বাদ দেন। মেম্বর তার নিজের লোকদের নাম তালিকাভূক্ত করে ওই এলাকার ৭০ জনের একটা তালিকা মঠবাড়িয়ার ইউএনও মহোদয়ের দপ্তরে জমা দেন। ফলে মেম্বরের কারসাজির তালিকা এখন অবধি চূড়ান্ত হয়ে যায়। বাদ পড়েন অসহায় সুমতি আর সরলা। সেই সাথে বাদ পড়েন এলাকার আরও দুস্থ ১৫জন।

আমি আজ এইসব নিরন্ন ও বঞ্চিত মানুষের গ্রামে গিয়েছিলাম। বঞ্চিতরা আমার সামনে বিক্ষোভ করেছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও মঠবাড়িয়ার ইউএনও আর এসিল্যাণ্ড মহোদয়ের সাহায্য চেয়েছেন। সেই সাথে প্রতিকার চেয়েছেন মেম্বর কেন তাদের নাম কেটে দিয়েছেন ? কেন এই দুস্থ মানুষেরা নিরন্নের কালে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া উপহারের তালিকা থেকে বাদ যাবেন ?
এই করোনা সংকটে ইউনিয়ন পর্যায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর মানবিক সহায়তার তালিকা নিরুপণে মঠবাড়িয়ার ১১ ইউনিয়নের সকল ইউপি সদস্যগণ নয়ছয় করেছেন। এই দুর্নীতিবাজ জনপ্রতিনিধি নিয়ে ভবিষ্যত বাংলাদেশ আমরা চাইনা।
আমার বেদনা হচ্ছে সুমতি সরলাদের নিরন্নের কালে কেন এলাকার মেম্বর নির্দয়! কেন তারা আজও ত্রাণ সহায়তা পেলেন না? দুঃখি মানুষের মানচিত্র ছিঁড়ে খুঁড়ে দেখি বঞ্চণায় কত পাপ জমেছে আমার সোসাইটিতে। ভাবছি সুমতি সরলাদের সংকট সময়ে কস্টের আখ্যান শোনার কেউ কি নেই ?

Comment here