বিশেষ প্রতিবেদন

পিরোজপুরে খাল দখল করে অবৈধভাবে স্থাপনা নির্মাণঃ ভোগান্তিতে এলাকাবাসী

বিশেষ প্রতিবেদকঃ

পিরোজপুর পৌর শহরের দামোদর খালের একটি শাখা খাল ভূমি দস্যুসহ কয়েকজন প্রভাবশালী দখলদারদের লোভের শিকার হয়ে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। খালটির উৎস্যমুখের কাছের অংশ অবৈধভাবে দখল করে তারা নির্মান করেছে বাড়ি ঘর ও পাকা স্থাপনা। আর ফলে দিন দিন খালের স্বাভাবিক গতি প্রবাহ কমে যাচ্ছে।
পিরোজপুর সরকারি সোহরাওয়ার্দী কলেজ রোডের সামান্তরাল এই খালটি এক সময় নৌকা চলাচল উপযোগী ছিল। খুমুরিয়া, শিকারপুর ও ঝাটকাঠি এলাকার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত এ খালের দৈর্ঘ্য আনুমানিক চার কিলোমিটার। শহরের প্রধান বাজারের উত্তর পাশ থেকে প্রবাহমান ঐতিহ্যবাহী দামোদর খাল থেকে শুরু ঝাটকাঠির জয়দেবীতলা হয়ে কুমারখালী বন অফিস পর্যন্ত এ খালটির অবস্থান। পিরোজপুর পৌরসভায় চলমান শত কোটি টাকা ব্যয়ের উপকূলীয় শহর উন্নয়ন প্রকল্পের অধীনে যেসব কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে তার মধ্যে এ খাল খননও অন্তর্ভূক্ত। এক বছর আগে খালের একাংশের প্রায় এক কিলোমিটার এলাকা খনন করা হয়েছে।
পৌরসভার ৪নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সহিদুল ইসলাম সিকদার জানান, খালটির পূর্ব পাশে শেখ মো. আজমল হোসেন লাবলু নামে একজন বাসিন্দা খালের গোড়ায় নানা ভাবে পাইলিং দিয়ে ভরাট করছেন। আজমল হোসেন স্থানীয়ভাবে ভূমিদস্যু নামে পরিচিত। সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, জনৈক প্রিয়নাথ ডাকুয়া নামে এক ব্যক্তি দেশ বিভাগের আগে ভারতে চলে যাওয়ায় জনৈক মৃত ব্যক্তির আম মোক্তারনামা তৈরী করে জাল দলিলের মাধ্যমে উক্ত আজমল হোসেন লাবলু জমি ভোগ দখল করছেন এবং পৌরসভা থেকে কোন অনুমতি ছাড়াই ঘর করে বসবাস করছেন। ওই ঘরে যাতায়াতের জন্য খাল ভরাট করে কলেজ রোড থেকে একটি পায়ে চলা ফুটব্রীজ তৈরী করে তা ব্যবহার করছেন। আজমল হোসেন লাবলু বলেন, এ কাজে তিনি পৌর কর্তৃপক্ষসহ কারও কোন অনুমতি নেননি। তবে তার ঘরের হোল্ডিং নম্বর রয়েছে।
এলাকাবাসী জানান, আজমল হোসেন লাবলু সব সময়ই প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতাদের প্রশ্রয়ে থেকে এ সব বেআইনী কাজ করে আসছেন। তিনি ডাক বিভাগের একজন পরিদর্শক এবং ঝালকাঠি জেলায় কর্মরত হলেও বেশীরভাগ সময় পিরোজপুরে থাকেন। বিভিন্ন সময় প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় অবস্থান করে ঠিকাদারী ব্যবসা, সালিশির নামে অর্থ আত্মসাৎ, ক্ষুদ্র ঋণ সমিতি করে অর্থ লগ্নি করা ইত্যাদি নানা বিতর্কিত কাজের সাথে জড়িত থাকায় এলাকাবাসী তাকে বাঁকা চোখে দেখেন।
শিকারপুর এলাকার বাসিন্দা সৈয়দ মো. ফাসাইনী (বাবুন্তু) জানান, পাঁচ বছর আগে আজমল ভাড়াটিয়া সেজে তাদের বাড়ীতে আসার পর একটি জাল দলিল করে স্থানীয় কতিপয় ক্ষমতাধর ব্যক্তির সহায়তায় জায়গার মালিক বনে যান। আগে তিনি (আজমল) শিকারপুর এলাকা দিয়ে চলাফেরা করলেও জায়গা দখলের পর প্রথমে একটি সাঁকো এবং পরে ফুটব্রীজ করে কলেজ রোড দিয়ে যাতায়াত করতে থাকেন। এই ফুটব্রীজটি তৈরী করার ক্ষেত্রে পৌরসভার কোন অনুমতি নেই বলে জানা যায়। এরপর থেকে শুরু হয় খাল ভরাটের প্রক্রিয়া। যা ক্রমান্বয় আশেপাশের কোন কোন বাসিন্দাদের মধ্যেও সংক্রমিত হয়। খালটির দুই পাড়ের খুমুরিয়া ও শিকারপুর এলাকার কেউ কেউ খাল দখলের উৎসবে মেতে উঠেন। কলেজ রোডে হান্নানসহ কিছু দোকানদার তাদের ঘরের পিছনে পাইলিং দিয়ে জায়গা দখল করেন। পৌরসভার ৪নং ওয়ার্ডের সাবেক পৌর কমিশনার জাহিদ হোসেন পিরু অভিযোগ করে বলেন, শুধু আজমল হোসেন কেন, এলাকার আরও অনেক ব্যক্তি এ খালটি দখলের সাথে যুক্ত। যার প্রমাণ খালের দুই পাড়েই রয়েছে।
পৌর কাউন্সিলর সহিদুল ইসলাম সিকদার বলেন, উপকূলীয় শহর উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় পিরোজপুর পৌরসভায় যে উন্নয়ন কাজ চলছে তার আওতায় এ খালটি এক কিলোমিটার খনন করার পর সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার বাকি কাজ না করে চলে যান। যদিও ওই ঠিকাদারের বিল প্রদান পৌরসভা থেকে বিরত রাখা হয়েছে।
এ ব্যাপারে পিরোজপুর পৌরসভার মেয়র মো. হাবিবুর রহমান মালেক বলেন, এই খালটির পুনর্খনন কাজ একটি প্রকল্পের আওতায় চলছে। অনিবার্য কারণে সাময়িক বন্ধ থাকলেও বর্ষার মৌসুমের পর বাকি অংশের খনন কাজ সম্পন্ন করা হবে। তিনি আজমল হোসেনসহ খালের দুই পাড়ের কতিপয় বাসিন্দা খাল দখল করে বাড়ীঘর, দোকানপাট বানানো ও সম্প্রসারণের কথা স্বীকার করে বলেন, পরবর্তী খননকালে এসব ভূমিদস্যুর কবল থেকে খালের জায়গা উদ্ধার করা হবে।
এদিকে, খাল দখল করে খালের পানি প্রবাহের গতি কমে যাওয়ায় খালটির অস্তিত্ব বিলীন হওয়ার উপক্রম হয়েছে। আর এতে খুমুরিয়া, কলেজরোড, শিকারপুর ঝাটকাঠী এলাকার মানুষ দুর্ভোগে পড়েছেন। খালে স্বাভাবিক পানি প্রবাহ না থাকায় এসব এলাকার দৈন্যদিন গৃহস্থলীর কাজ, পানি নিস্কাশন বাঁধাগ্রস্থ হচ্ছে।

Comment here