বিশেষ প্রতিবেদন

পিরোজপুরের দু’টি সরকারি নারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানঃ জায়গার অভাবে নতুন ভবন নির্মাণ করা যাচ্ছেনা

বিশেষ প্রতিবেদকঃ
পর্যাপ্ত জমি না থাকায় পিরোজপুর জেলা শহরে অবস্থিত প্রধান দু’টি সরকারি নারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অবকাঠামোগত উন্নয়ন করা সম্ভব হয়ে উঠছে না। পিরোজপুর সরকারি মহিলা কলেজ এবং পিরোজপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় দু’টির প্রতিষ্ঠাকালীন স্থানাভাব নানা চেষ্টায়ও দূর করা যাচ্ছে না।

১৯৭৯ সালে একদল শিক্ষানুরাগীর চেষ্টায় পিরোজপুর মহিলা কলেজ সীমিত পরিসরে স্থাপিত হয়। রায় বাহাদুর সত্যেন্দ্রনাথ রায় চৌধুরীর রিকিউজিশন বাড়ীতে ৫৫ শতাংশ জমির উপর কলেজটি চালু হয়। ১৯৮৫ সালে জেলা শহরের একমাত্র উচ্চ নারী শিক্ষার এ প্রতিষ্ঠানটি সরকারি হয়। পরে বিভিন্ন সময় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে দুই তলা, তিন তলা ও চার তলার তিনটি একাডেমিক ভবন এবং চার তলার একটি হোস্টেল নির্মিত হয়। হোস্টেলটি নির্মাণের জন্য পাশের ২৬ শতাংশ জমি স্বাস্থ্য বিভাগের কাছ থেকে নানা দেনদরবার করে আনা হয়। এসব অবকাঠামোর মধ্যে মোট ৮১ শতাংশ জমিতে অবস্থিত চারটি ভবন ও একচিলতে খোলা মাঠের ক্যাম্পাসে বর্তমানে উচ্চ মাধ্যমিক, ডিগ্রী পাশ ও ডিগ্রী সম্মানের ১৮’শ ছাত্রী পড়াশুনা করছে।

পিরোজপুর সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ সাইফুদ্দিন বলেন, এ বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থীর চাপ এই ছোট্ট পরিসরের ক্যাম্পাস সামাল দিতে পারছে না। এ কলেজের জন্য ১০ তলা, ছয় তলা ও চার তলা বিশিষ্ট তিনটি বহুতল একাডেমিক ভবন এবং ১০০ আসনের চার তলা বিশিষ্ট একটি হোস্টেল নির্মাণের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে আসা প্রস্তাবনা জায়গা সংকটের কারণে ফেরত গেছে। জেলা প্রশাসন থেকে শহরের আশেপাশে এ মহিলা কলেজের জন্য ভিন্ন ক্যাম্পাস স্থাপনেরও প্রস্তাব রয়েছে। অধ্যক্ষ সাইফুদ্দিন এ ক্ষেত্রে বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে কলেজের পাশের স্বাস্থ্য বিভাগের যেসব পরিত্যক্ত জমি রয়েছে যেমন, এককালীন সাবডিভিশনাল মেডিকেল অফিসারের বাসভবন, নার্সের বাসভবন এবং সিভিল সার্জনের বাসভবনের পাশে পরিত্যক্ত ও জরাজীর্ণ অব্যবহৃত হেলথ্ অফিসের স্থানে মহিলা কলেজের জন্য নতুন ভবন নির্মাণের দাবী জানিয়েছেন।

এদিকে, পিরোজপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়টি রায়েরকাঠির জমিদার সমরেন্দ্র রায় চৌধুরীর পরিত্যক্ত প্রায় এক একর জমিতে অবস্থিত। ১৮৯৩ সালে পিরোজপুর আরবান গার্লস হাই স্কুল নামে প্রতিষ্ঠিত এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি ১৯৬৮ সালে সরকারিকরণ করা হয়। পরে বিভিন্ন সময়ে বিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বহুতলা ও একতলা বিশিষ্ট একাডেমিক ভবন এবং প্রধান শিক্ষকের একতলা বাসভবন নির্মিত হয়। এর মধ্যে তিন তলা বিশিষ্ট বড় ভবনটি ৩/৪ বছর ধরে জরাজীর্ণ থাকায় ব্যবহার অনুপোযোগী হয়ে পড়ে। গত ১৬ জুন জেলার কনডেমনেশন কমিটি প্রধান শিক্ষকের বাসভবনসহ এ ভবনটিকে ব্যবহার অযোগ্য ঘোষণা করে সেখানে স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর থেকে ১০ তলা বিশিষ্ট নতুন একটি একাডেমিক ভবন নির্মাণের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। প্রায় ১৭’শ ছাত্রী নিয়ে দুই শিফটে বিদ্যালয়টি পরিচালিত হয়।

পিরোজপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইদ্রিস আলী আজিজী বলেন, এই বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থীর জন্য এই ক্যাম্পাসটি যথেষ্ট নয়। স্থানাভাবে বিদ্যালয়ের ছোট্ট পরিসরের খেলার মাঠে বিভিন্ন ক্রীড়া অনুষ্ঠান সম্ভব হয় না। তিন তলা বিশিষ্ট ব্যবহার অযোগ্য ঘোষিত একাডেমিক ভবনটি ভেঙ্গে ফেলার পর তা পুনর্নির্মাণ করতে কয়েক বছর সময় লাগবে। এ সময় ক্লাশের জন্য স্থান সংকুলান হবে না এবং বালিকা বিদ্যালয়ের জন্য বিকল্প ক্যাম্পাস বিদ্যালয়ের বাইরে পরিচালনাও দূরূহ হবে।

দু’টি নারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্থানাভাব এবং তার সমাধান খুঁজে পাওয়া আপাতত সম্ভাবনা না থাকায় স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের পিরোজপুর জোনের নির্বাহী প্রকৌশলী প্রতিভা সরকার বলেন, উচ্চ বিদ্যালয়টিতে বহুতল বিশিষ্ট ভবন নির্মাণ করে সীমিত মাত্রায় হলেও সমস্যার সমাধান করা যাবে। কিন্তু সরকারের ভবিষ্যত পরিকল্পনা অনুযায়ী মাস্টার প্লান করে সরকারি মহিলা কলেজের জন্য নতুন কোন অবকাঠামো নির্মাণের সুযোগ নেই।

Comment here