নাজিরপুর

নাজিরপুরে স্বাধীতনার বিরোধীতাকারী জামায়াত-বিএনপিসহ অনুপ্রবেশকারী হাউব্রিড নিয়ে কমিটি গঠনঃ আ’লীগের বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ

ফিরোজ মাহমুদ :
পিরোজপুর জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি ও সাবেক এমপি একেএমএ আউয়াল ও তার অনুসারীরা নাজিরপুর উপজেলার ৯ টি ইউনিয়নের ৮১ টি ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের সম্মেলন করে ত্যাগী ও প্রকৃত আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বাদ দিয়ে নৌকা ও বাংলাদেশের স্বাধীতনার বিরোধীতাকারী জামায়াত-বিএনপিসহ অনুপ্রবেশকারী হাউব্রিড নিয়ে কমিটি গঠন করেছেন বলে অভিযোগ তুলে এর প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে নাজিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগ।
বিক্ষোভ সমাবেশে নাজিরপুর উপজেলা, বিভিন্ন ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সম্মেলন আয়োজন প্রক্রিয়াকে অগণতান্ত্রিক ও অগঠনতান্ত্রিক আখ্যা দিয়ে সকল কমিটি বাতিল করে নতুন করে ত্যাগী ও প্রকৃত আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের নিয়ে সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি ঘোষণা দেওয়ার আহবান জানানো হয়। অন্যথায় এসব হাইব্রিড নেতাকর্মী ও তাদের মদতদাতদের নাজিরপুরের মাটিতে প্রতিহত করার ঘোষণা দেয়া হয়।
রবিবার বেলা ১১ টায় উপজেলা সদরে বঙ্গবন্ধুর মূর‌্যাল চত্ত্বরে অনুষ্ঠিত ওই সমাবেশে উপজেলা আওয়ামী লীগসহ ও বিভিন্ন ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের কয়েক হাজার নেতাকর্মীরা অংশ নেয়।

যুবলীগ নেতা এসএম রোকনুজ্জামানের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের কমান্ডার শেখ আব্দুল লতিফ, উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা ও জেলা পরিষদের সদস্য সুলতান মাহমুদ খান, জেলা পরিষদের সদস্য তুহিন হালদার তিমির, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক দ্বিপংকর গোলদার দিপু, উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের ভাইস-চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান রঞ্জু, উপজেলা যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকুর রহমান তুহিন, মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ড কাউন্সিলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মিজানুর রহমান লিটন, উপজেলা ছাত্রলীগের আহবায়ক তরিকুল ইসলাম চৌধুরী তাপস প্রমূখ।
এ সময় বক্তার বলেন, পিরোজপুর-১ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য মৎস্য ও প্রাণি সম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিমসহ নাজিরপুরের পরীক্ষিত নেতাকর্মীদের মতামতের কোন মূল্যায়ন না করে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য একেএমএ আউয়াল তার অনুসারীদের নিয়ে আওয়ামী লীগের প্রতীক নৌকা ও বাংলাদেশের স্বাধীতনার বিরোধীতাকারী জামায়াত-বিএনপিসহ অনুপ্রবেশকারী হাউব্রিড নিয়ে সম্মেলন আয়োজন করে তাদের পছন্দমত লোকজননিয়ে পকেট কমিটি গঠন করে যাচ্ছে। একেএমএ আউয়াল ও তার অনুসারীরা রাজাকার, জামায়াত-বিএনপি পুর্নবাসন করে চলছে।
বক্তারা বলেন, দুর্নীতির দায়ে দুদকের চলমান অভিযোগ থাকার পরও একেএমএ আউয়াল অনিয়মের আশ্রয় নিয়ে নাজিরপুরে এসে ত্যাগী নেতাকর্মী ও সময়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ নেতাকর্মীদের বাদ দিয়ে যে খেলা শুরু করেছে তা এ মাটিতে চলতে দেওয়া হবে না। তিনি যদি এই খেলা বন্ধ না করে তাহলে আউয়ালসহ আশ্রয়-প্রশ্রয়দাতাদের কঠোরভাবে প্রতিহত করা হবে। একেএমএ আউয়ালকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ বা দেশ বিরোধী কোন কর্মকান্ড করতে দেওয়া হবে না।

উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের কমান্ডার শেখ আব্দুল লতিফ তার বক্তব্যে বলেন, আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশের বিষয়টি এখন দেশময় আলোচিত-সমালোচিত ঘটনা। রাজাকার ও শান্তি কমিটির সদস্যদের উত্তরসূরিরা এখন তৃণমূল আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে। অর্থের বিনিময়ে দলের বিভিন্ন পদ-পদবি কিনেছেন তারা। হয়ে উঠেছেন বড়ো নেতাদের ঘনিষ্ঠ। একই সঙ্গে এসব পদবি ব্যবহার করে স্থানীয় গুরুত্বপূর্ণ সরকারি চাকরিতে নিয়োগসহ ব্যবসা, বাণিজ্য, ঠিকাদারিসহ সবকিছু নিজেদের আয়ত্বে নিয়েছেন। এমনকি মাদক ব্যবসায় জড়িত তাদেরই সিন্ডিকেট। এসব বিরোধী মতাদর্শীরা দলীয় পরিচয় ব্যবহার করে দুর্নীতি, জমি দখল, নিয়োগ-বদলি বাণিজ্য, টিআর-কাবিখা প্রকল্পে লুটপাটসহ নানা কর্মকান্ডে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছেন। তাদের দাপটে সত্যিকারের মুক্তিযোদ্ধা ও ত্যাগী নেতারা হয়ে পড়েছে কোনঠাসা। দলীয় ফোরামের একাধিক বৈঠকে ত্যাগী নেতারা এই অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে নানা তথ্য তুলে ধরেও কোনো প্রতিকার হয়নি।

বরং যারা তাদের এসব পদ-পদবি দিয়েছেন তারাই তাদের রক্ষা করেন। বিষয়গুলো দলীয় হাইকমান্ডের নজরের বাইরে নয়। মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দলে এই অনুপ্রবেশের ঘটনা হঠাৎ করে ঘটেনি ২০০৯ সাল থেকে, ঢালাওভাবে হয়েছে ২০১৪ সালের পর এবং সব অনুপ্রবেশই স্থানীয় সাবেক এমপির হাত ধরে। দলে বিরোধী মতাদর্শীদের এ ধরনের ঢালাও অনুপ্রবেশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কয়েকবারই দলীয় নেতাদের সতর্ক করেছেন।

সমাবেশের আগে উপজেলা আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়ে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে উপজেলা সদরের বঙ্গবন্ধুর মূর‌্যাল চত্ত্বরে বিক্ষোভ সমাবেশে মিলিত হয়।

Comment here