নাজিরপুর

নাজিরপুরে দফাদার-মহল্লাদার নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে ইউএনও’র বিরুদ্ধে

নাজিরপুর প্রতিনিধিঃ 

পিরোজপুরের নাজিরপুরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) বিরুদ্ধে দফাদার ও মহল্লাদার নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ অনিয়মের বিচার চাওয়ায় ইউএনও ক্ষিপ্ত হয়ে বিচারপ্রার্থীর ভাইকে মিথ্যা ঘটনায় মোবাইলকোর্টের মাধ্যমে তিন মাসের সাজা দেন বলেও অভিযোগ করেছে ভুক্তভোগী পরিবার। বয়স জটিলতা ও জাল-জালিয়াতির অভিযোগগুলো যাচাই-বাছাই ছাড়াই লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পরও ইউএনও এ ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ না করে তাদেরই নিয়োগ দিয়ে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেন। 
দুই নিয়োগপ্রত্যাশী নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অনিয়ম ও জাল-জালিয়াতির অভিযোগ তুলে প্রতিকার চেয়ে জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন। জেলা প্রশাসক অভিযোগের বিষয়টি জরুরি ভিত্তিতে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ইউএনওকে নির্দেশ দেন। কিন্তু ইউএনও ওই অভিযোগ আমলে না নিয়েই নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে একজন দফাদার ও সাতজন মহল্লাদারকে নিয়োগ দিয়েছেন।
দফাদার পদে আবেদনকারী লিটন হাজরা অভিযোগ করে জানান, নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অনিয়ম সংক্রান্তে ডিসির কাছে তিনি লিখিত অভিযোগ করায় তার ওপর ইউএনও ক্ষিপ্ত হন। এ কারণে নতুন নিয়োগ দেওয়া দফাদার রাইমোহন বালার মাধ্যমে ৩ নভেম্বর তার ভাই রিপন হাজরাকে কৌশলে বাড়ি থেকে ডেকে ইউএনওর কার্যালয়ে আনা হয় এবং তার কাছে ১০ গ্রাম গাঁজা পাওয়া গেছে দেখিয়ে ইউএনও নিজ কার্যালয়ে মোবাইলকোর্ট বসিয়ে তাকে তিন মাসের বিনাশ্রম কারাদ দেন। বর্তমানে রিপন হাজরা কারাগারে রয়েছেন। পরে এ নিয়োগ সংক্রান্তে আর কোথাও অভিযোগ করলে পরিণাম আরও খারাপ হবে বলে ওই পরিবারকে নানাভাবে হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন লিটন হাজরার বৃদ্ধ পিতা জগবন্ধু হাজরা।

গত ১ জুলাই উপজেলার মালিখালী ইউনিয়নে পাঁচটি, দেউলবাড়ী ইউনিয়নে দুটি ও শাঁখারীকাঠি ইউনিয়নে একটিসহ মোট ৮টি পদে দফাদার ও মহল্লাদার নিয়োগ দেওয়ার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর সংশ্নিষ্ট চেয়ারম্যানদের মাধ্যমে যাদের নিয়োগ দেওয়া হবে তা চূড়ান্ত করে রাখা হয় এবং চলতি বছরের ৬ আগস্ট ইউএনওর কার্যালয়ে নামমাত্র মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া হয়। কোন কোন প্রার্থীকে নেওয়া হবে তা আগে থেকেই নির্ধারণ করা ছিল বলে জানান খোদ নিয়োগ বোর্ডের এক সদস্য।

নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে আবেদনকারীদের বয়সসীমা ১৮ থেকে ৩০ বছর এবং শিক্ষাগত যোগ্যতা অষ্টম শ্রেণি পাস উল্লেখ রয়েছে। তবে ভোটার তালিকা অনুযায়ী দফাদার পদে নিয়োগ পাওয়া রাইমোহন বালার বয়স ৩৯ বছর। ভোটার তালিকায় তিন জায়গায় আলাদা আলাদা ক্রমিকে তার একই নাম-ঠিকানা রয়েছে। তবে তিন জায়গায় জন্ম তারিখ ভিন্ন ভিন্ন। সর্বশেষ জন্ম তারিখ অনুযায়ী তার বয়স ২৫ বছর। মহল্লাদার পদে নিয়োগপ্রত্যাশী লিপসন বিশ্বাসের অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, মহল্লাদার পদে নিয়োগপ্রাপ্ত দেবাশীষ বিশ্বাসের জাতীয় পরিচয়পত্রে তার জন্ম তারিখ ২৩ জুলাই ১৯৮৪ উল্লেখ রয়েছে। এখানে তার বয়স ৩৫ বছরেরও বেশি। তাছাড়া নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে প্রার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতা অষ্টম শ্রেণি পাস উল্লেখ থাকলেও জাতীয় পরিচয়পত্রের ডাটাবেজের তথ্য অনুযায়ী তিনি পঞ্চম শ্রেণি পাস। জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে দেবাশীষ বিশ্বাস বয়স ও শিক্ষাগত যোগ্যতা পরিবর্তন করে ওই পদে নিয়োগ নিয়েছেন বলে জেলা প্রশাসক বরাবর আরেকটি লিখিত অভিযোগ করেন তিনি।

নিয়োগ বোর্ডের সদস্য নাজিরপুর থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) জাকারিয়া বলেন, নিয়োগ পরীক্ষা চলাকালে প্রার্থীর বয়স নিয়ে অভিযোগ উঠলে ওই প্রার্থীকে আমি কোনো নম্বর না দিয়ে সেখানে বয়স জটিলতা লিখে রেখেছিলাম। তাছাড়া নিয়োগ বোর্ডের সদস্য হিসেবে আমি চূড়ান্ত রেজাল্ট শিটে কোনো স্বাক্ষরও করিনি। এ ছাড়া নিয়োগ বোর্ডের আরেক সদস্য উপজেলা প্রকৌশলী মো. জাকির হোসেন মিয়াও জানিয়েছেন তিনিও চূড়ান্ত রেজাল্ট শিটে স্বাক্ষর করেননি।

নিয়োগ কমিটির সভাপতি ইউএনও রোজী আকতার মোবাইল ফোনে বলেন, উৎকোচ গ্রহণের বিষয়টি সত্য নয়। তবে যাদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতার সার্টিফিকেট অনুযায়ী তাদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

Comment here