নাজিরপুর

নাজিরপুরে খাল দখলের উচ্ছেদে গিয়ে বিপাকে পড়েছে ভূমি অফিস

নিহস্ব প্রতিবেদকঃ
পিরোজপুরের নাজিরপুরে খাল দখলের উচ্ছেদে গিয়ে বিপাকে পড়েছে উপজেলা ভূমি অফিস। এ উপজেলার সদর ইউনিয়নের দীঘিরজান বাজারের পশ্চিম পাশের খালের দখল উচ্ছেদে এ ঘটনা ঘটেছে।
জানা গেছে, সোমবার (৬জুলাই) সকালে উপজেলার দীঘিরজান বাজার সংলগ্ন একটি খাল দখলের উচ্ছেদ করতে গেলে দখলের সঙ্গে জড়িতরা স্থানীয় হিন্দুদের জমি দখল ও কালিমন্দির ভাংচুরের অভিযোগ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারণা করে। আর এ ঘটনায় দেশ ব্যাপী তোলপাড় সৃষ্টি হয়। বিপাকে পড়েন ভূমি অফিস।
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ফাহমি মো. সায়েফ বলেন, নাজিরপুর সদর ও মাটিভাঙ্গা ২ ইউনিয়নের বড় বুইচাকাঠী ও ২৫ বানিয়ারী মৌজার সংলগ্ন ওই জায়গায় ১৫ ফুট প্রসস্থ একটি খাল রয়েছে। গত কয়েকদিন আগে ওই খাল দখলের খবর আসে। পরে ভূমি অফিসের লোকজন পাঠিয়ে সেখানে ওই দখল উচ্ছেদের অভিযান চালানো হয়। মন্দিরের জমি বেদখল বা সেখানে বেড়া ভাঙ্গার কোন ঘটনা ঘটেনি।
ওই জমি সংলগ্ন ও ওই জমির মালিক দাবি করা উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মনিন্দ্র নাথ মজুমদারের পুত্র মাটিভাঙ্গা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক দীপ্তেন মজুমদার বাপ্পী বলেন, ওই জমি দখল করতে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের প্রস্তাবিত কমিটির সভাপতি লোকমান হাকিম হিরু, কামরুল শেখ কাবুল ও হেদায়েত শেখ চেষ্টা করছে। আমাদের পৈত্রিক ওই জায়গার ১১শতাংশ জমি নিজেদের দখলে রাখতে তাতে বেড়া দিয়েছি। এ সময় সেখানে থাকা ওই জমির মালিকানা দাবি করা সুশিল মজুমদার বলেন, ওই জমি আমাদের। তবে সরকারের দাবি করা খাল বা জায়গা আমাদের বাড়ির ভীতরে পড়েছে।
মঙ্গলবার (৭জুলাই) জেলা পূজা উদযাপন পরিষদ বিকালে সরেজমিন পরিদর্শন করেছেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি বিমল মন্ডল, সাধারণ সম্পাদক গোপাল চন্দ্র বসু, যুগ্ম সাধারণ সাম্পাদক দোলা গুহ ও চন্দ্র শেখর হালদার, নাজিপুর উপজেলা সভাপতি মাস্টার সুখরঞ্জন বেপারী, সাধারণ সম্পাদক তুহিন হালদার তিমির প্রমুখ।
জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক গোপাল চন্দ্র বসু জানান, ‘আমরা সরেজমিনে গিয়ে দেখতে পেয়েছি ২ শত বছরের পুরানো শিব মন্দির যেমন ছিলো তেমনিই আছে। ওখানের জমিটি মজুমদারদের (হিন্দু) বলে তারা দাবি করছেন।
মঙ্গলবার (৭জুলাই) বিকালে সরেজমিনে গিয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা ও দেখা গেছে, সেখানে থাকা শিব মন্দির ও তার জন্য দেয়া পূর্ব-পশ্চিমের বেড়া অক্ষত রয়েছে। উত্তর-দক্ষিণের যে অংশের বেড়া ভাঙ্গা হয়েছে সেখানে রেকডিও খাল ছিলো। স্থানীয়রা সেই খাল দখল করতে বেড়া দেন। ভূমি অফিস সেই বেড়া ভেঙ্গে ফেলেন।
এ ব্যাপারে স্থানীয় এমপি (পিরোজপুর-১) মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রী শ.ম রেজাউল করিম বলেন, ওই জমি স্থানীয় হিন্দুদের হলে তা তারাই ভোগ করবেন। হিন্দুদের উপর কোন অত্যাচার বা মন্দিরে আঘাত করা হলে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
শ.ম রেজাউল করিমের ছোট ভাই এস এম নওশের বাদশা বলেন,সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ধ্বংস করতে উঠে পড়ে লেগেছে, কিছু সুযোগ সন্ধানী। তারা অনেকেই রাতারাতি বিগত দিনে কমিশন/চাদাবাজি/অন্যের সম্পত্তি দখল করে টাকার পাহাড় গড়েছেন। বি এন পি জামাত সরকারের আমলে হিন্দুদের উপর বানিয়ারী সহ অন্যন্য জায়গায় যে নারকীয় তান্ডব চলেছে, তাও ঐসব দালালদের কাছে নগন্য মনে হয়েছে দিঘীরজানের ঘটনায়। অথচ দিঘিরজানে যা হয়েছে তা সরকার বনাম ব্যাক্তি মালিকানাধীন জমি নিয়ে। শিব মন্দির ভাঙ্গার কোন ঘটনা আদৌ ঘটেনি। লম্পট ওইসব দালালদের সবাই প্রতিহত করুন। কোনমতে শত বৎসরের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনস্ট করতে দেয়া হবেনা।
এ ব্যাপারে ঘটনাস্থলে তদন্তকরা নাজিপুর থানা পুলিশের ওসি (তদন্ত) মো. জাকারিয়া হোসেন জানান, ভূমি অফিস তাদের জমি উদ্ধারে কাজ করছেন। আর এ জন্য সেখানে থাকা এক হিন্দু ও মুসলমানের দোকানও উচ্ছেদ করা হয়েছে। শিবমন্দির ভাঙ্গা বা মন্দিরের কোন বেড়া ভাঙ্গা হয় নি।

Comment here