নাজিরপুর

নাজিরপুরে খাদ্য বান্ধব কর্মসূচীর চাল নিয়ে নয় ছয় করতে গিয়ে ইউপি সদস্য জনতার হাত ধরা

বিশেষ প্রতিনিধিঃ
সরকারের বান্ধব কর্মসূচীর ১০ টাকা কেজির চাল নিয়ে নয় ছয় করতে গিয়ে ধরা খেলেন পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার কলারদোয়ানিয়া ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মনিরুল ইসলাম।
জানা যায়, ওই ইউনিয়নের খাদ্য বান্ধব কর্মসূচীর কার্ড নং ২৬০, ২৭২, ২৮৬ এর প্রকৃত কার্ডধারীদের না জানিয়ে কৌশলে ইউপি সদস্য মনিরুল ইসলাম ওই কার্ডের অনুকুলে বরাদ্দকৃত চাল উত্তোলন করে আত্মসাত করে আসছে। একই পন্থায় ইউপি সদস্য মনিরুল ইসলাম ওই তিনটি কার্ডের অনুকূলে চলতি (এপ্রিল) মাসের বরাদ্দকৃত চালও উত্তোলন করেছে।
দেশে চলমান করোনা পরিস্থিতিতে গত মার্চ মাস থেকে খাদ্য বান্ধব কর্মসূচীর চাল বিক্রিতে অনিয়ম রোধে ইউএনও মোহাম্মদ ওবায়দুর রহমান কঠোর ভুমিকা পালন করে আসছে। ইতোমধ্যে এ কর্মসূচীর চাল বিক্রিতে নানা অনিয়মের অভিযোগে তিনি ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ওই ইউনিয়নের দু’জনসহ তিনজনকে কারাদণ্ড প্রদানসহ দুই ডিলারের ডিলারশীপ বাতিল ও জামানত বাজেয়াপ্ত করেছেন। ওই ঘটনায় ভীত হয়ে ওই ইউপি সদস্য মুনিরুল ইসলাম গত বুধবার তার কাছে থাকা ওই কার্ড তিনটি ছিড়ে উপজেলার মেদা বাজারে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের পিছনে ফেলে দেয়। যা দেখতে পায় স্থানীয় রফিক।
এরপর ওই কার্ড উদ্ধার করে ওই ইউপি সদস্যের নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওই কার্ডে যাদের নাম রয়েছে তাদের না পাওয়ায় তিনি কার্ডগুলো ছিড়ে ফেলেছেন। তখন তিনি কার্ডগুলো মিলিয়ে দেখতে পান যা ৬নং ওয়ার্ডের বাসিন্ধা পালশের স্ত্রী রুশিয়া, চান মিয়ার স্ত্রী মঞ্জুয়ারা ও ৮নং ওয়ার্ডের খালেকের ছেলে আল-আমিনের নামে ইস্যু করা। পরে তাদের সাথে যোগাযোগ করে জানতে পারেন তারা ওই কার্ডের ব্যাপারে কিছু জানেন না এবং কখনও চাল উত্তোলন করেনি।
এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় স্থানীয়রা চাল আত্মসাতকারী ওই ইউপি সদস্যকে উপজেলার মেদা বাজারে অবরুদ্ধ করে ইউএনওকে অবহিত করেন। পরে সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান হাসনাত ডালিম সেখানে গিয়ে ছিড়ে ফেলা ওই তিনটি কার্ডসহ ইউপি সদস্যকে তার হেফাজতে নেন।
কার্ডধারী মঞ্জুয়ারা জানান, চাল নেয়া তো দুরের কথা, তার নামে খাদ্য বান্ধব কর্মসূচীর কার্ড ইস্যু হয়েছে সেটাই তিনি জানেন না।
অপর কার্ডধারী আল আমিন জানান, গত চার কিস্তি ধরে তিনি চাল পাচ্ছেন না। তাকে বলা হয়েছে তার কার্ড হারিয়ে গেছে। আজ তিনি জানতে পারেন তার কার্ডসহ তিনটি কার্ড ইউপি সদস্য মনিরের কাছে ছিলো। তা তিনি গতকাল ছিড়ে ফেলে দিলে স্থানীয় রফিক ওই ছেড়া কার্ড উদ্ধার করেছেন।
ফেলে দেয়া কার্ড উদ্ধারকারী রফিক বলেন, ইউপি সদস্য মনিরের দোকানের পিছনে তিনি ছেড়া কার্ড গুলো পেয়ে তাকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি কার্ডগুলো ছিড়ে ফেলে দেয়ার কথা স্বীকার করে জানান, ওই নামের লোক না পাওয়ায় তিনি ছিড়ে ফেলেছেন। পরে খোঁজ নিয়ে কার্ডধারী তিনজনকেই পাওয়া যায় এবং তারা ওই কার্ড দিয়ে কখনো চাল তুলেনি বলে জানান। ইউপি সদস্য মনির এতদিন অন্য লোক দিয়ে ওই কার্ডের চাল উত্তোলন করেছেন।
স্থানীয় সজল জানান, চেয়ারম্যান হাসনাত ডালিম এসে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে জানিয়ে অবরুদ্ধইউপি সদস্য ও উদ্ধারকৃত কার্ড তিনটি নিয়ে যান। ঘটনার বিষয়ে জানতে ইউপি সদস্য মনিরুল ইসলামের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করেও তা বন্ধ পাওয়া যায়।
ইউপি চেয়ারম্যান হাসনাত ডালিম বলেন, ইউএনও স্যারের ফোন পেয়ে আমি সেখানে গিয়েছি এবং তার নির্দেশে ছেড়া কার্ডগুলোসহ ইউপি সদস্যকে নিয়ে এসেছি। তাছাড়া ভুক্তভোগী ওই তিন ব্যাক্তির অভিযোগ নেয়া হয়েছে। ইউএনও স্যার বিষয়টি তদন্ত করে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
ইউএনও মোহাম্মদ ওবায়দুর রহমান জানান, ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যানকে সেখানে পাঠিয়ে কার্ডগুলো উদ্ধার করা হয়েছে। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Comment here