বিশেষ প্রতিবেদন

দুশ’ বছরের ইতিহাস বহন করে তুষখালী লঞ্চঘাট

দেবদাস মজুমদারঃ
সন্ধ্যা কচা বলেশ্বর বিধৌত আমাদের পিরোজপুর উপকূল। পানিমূল এ উপকূলের জীবধারায় নৌপথ ছিলো চলাচলের একমাত্র মাধ্যম। আর দক্ষিণ এ জনপদের নৌ প্রবেশদ্বার হিসেবে খ্যাত আমাদের মঠবাড়িয়ার তুষখালী লঞ্চঘাট। প্রাচীন এ ঘাট দিয়ে আমরা আবহমান কাল ধরে দেশের দূর দুরান্তে যাতায়াত করেছি। একসময় আমাদের চিঠিপত্র যেতো লঞ্চে। নাম ছিলো ডাক লঞ্চ। আমি শৈশবে সেহাঙ্গল নামে একটা লঞ্চে চড়ে বরিশাল গিয়েছিলাম। এ জনপদের মানুষের কত স্মৃতিমাখা মায়াময় ক্ষণ গেছে এ ঘাটে। তখন ভোর রাতে ঢাকার পথে লঞ্চ ছেড়ে যেতো । সড়ক পথে তখন ভোররাতে এ ঘাটে আসা বেশ কঠিনই ছিলো। লঞ্চ ধরতে রাতে নৌকায় চড়ে লঞ্চঘাটে গিয়ে মানুষের রাত কাটতো। টাপুরে নাওয়ের মাঝি ভোর রাতে ঢাকার লঞ্চে যাত্রীদের নিরাপদে যথাসময়ে তুলে দিতেন। মঠবাড়িয়ার মানুষ যোগাযোগের স্মৃতি হাতড়ে দেখলে আগেই আসবে তুষখালী লঞ্চঘাট। আমাদের উপকূলের অর্থনীতি, তথ্য যোগাযোগ আর মানুষের চলাচলে একদা তুষখালী লঞ্চঘাটের কোনো বিকল্প ছিলোনা। আমাদের উপকূলের উৎপাদিত ফসল, মাছ আর নানা পণ্য সামগ্রী পরিবহনে তুষখালী লঞ্চঘাটের বিকল্প আর ছিলোনা।
বাপ দাদার আমলের এ ঘাটের সমৃদ্ধ ইতিহাস আছে। শুনেছি একদা তুষখালী লঞ্চঘাট স্থাপনের স্থান নিয়ে দুই তীরের মানুষের মাঝে অনাকাঙ্খিত লড়াই হয়েছে। ভাবছি ঘাটের ২০০ বছরের ইতিহাস অনুসন্ধান প্রয়োজন।
তুষখালী লঞ্চঘাট আমাদের মঠবাড়িয়া জনপদের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের অংশ বলেই মনে করি। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত এ ঘাট আমাদের সমৃদ্ধ করেছে। মঠবাড়িয়া জনপদের ঐতিহাসিক যত নিদর্শন রয়েছে তার মধ্যে তুষখালী লঞ্চঘাট উল্লেখযোগ্য।
তুষখালী লঞ্চঘাট আবহমান কাল ধরে আজও আমাদের জীবনধারায় একাকার। কালের পরিক্রমায় কত কি বিলুপ্ত হয়ে গেছে, তবু আজও আমাদের তুষখালী লঞ্চঘাট কালের সাক্ষি হয়ে আছে। আজও ঘাটে প্রাণচাঞ্চল্য আছে।

Comment here