অমানবিক!

ঝুপড়ি ঘর থেকে সেই স্বাস্থ্যকর্মীকে বাড়িতে নিয়ে গেল পুলিশ

অনলাইন ডেস্কঃ
অবশেষে ঝুপড়ি ঘর থেকে সেই স্বাস্থ্যকর্মীকে বাড়িতে নিয়ে গেল পুলিশ। সোমবার দুপুরে তাকে উদ্ধার করে বাড়ি নিয়ে যায় পুলিশ। পরে তাদের ঘরের পাশে একটি ঘর তুলে সেখানে রাখা হয় স্বাস্থ্যকর্মীকে। এছাড়া তালপাতার সেই ঝুপড়ি ঘর ভেঙে দিয়েছে পুলিশ।
ঢাকার একটি হাসপাতালে চাকরি করতেন এক নারী স্বাস্থ্যকর্মী (২১)। গত মঙ্গলবার (২১ এপ্রিল) তিনি ছুটি নিয়ে বাড়িতে আসেন। বাড়িতে আসার পর স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতার নির্দেশে এই নারী স্বাস্থ্যকর্মীকে এলাকাবাসী একটি নির্জন স্থানে পুকুরের মধ্যে তালপাতা দিয়ে ঝুপড়ি ঘর তৈরি করে তার মধ্যে কোয়ারেন্টিনে রাখেন। প্রায় ১ সপ্তাহ ধরে রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে এই নারী স্বাস্থ্যকমী ওখানে অবস্থান করছেন। এ ধরনের একটি খবর আজ কয়েকটি জাতীয় দৈনিক ও অনলাইন নিউজ পেপারে প্রকাশিত হয়েছে।
ঘটনাটি ঘটেছে গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার সাদুল্লাপুর ইউনিয়নের লগন্ডা গ্রামে। এ ঘটনাটি সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমেও প্রচার হওয়ার পর গোটা উপজেলাব্যাপী আলোচনার ঝড় ওঠে।
জানা গেছে, ঢাকার ইমপালস হাসপাতালে চাকরি করতেন এই নারী স্বাস্থ্যকর্মী। করোনাভাইরাসের কারণে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে ছুটি দিয়ে দেয়। ছুটিতে তিনি বাড়িতে আসেন। বাড়িতে আসার খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে সাদুল্লাপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক প্রশান্ত বাড়ৈর নির্দেশে এলাকাবাসী এই নারী স্বাস্থ্যকর্মীকে তার বাড়ির প্রায় ৪০০ মিটার দূরে একটি নির্জন স্থানে পুকুরের ভেতর তালপাতা দিয়ে ঝুপড়ি ঘর তৈরি করে কোয়ারেন্টিনে রাখে।
ভুক্তভোগী ওই নারী স্বাস্থ্যকর্মী বলেন, আজ প্রায় এক সপ্তাহ ধরে আমি এখানে রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে মানবতার জীবন যাপন করছি। একজন স্বাস্থ্যকর্মী হিসেবে আমি অনেক মানুষকে স্বাস্থসেবা দিয়েছি। আর আজ এখানে থেকে আমার স্বাস্থ্য হুমকির মুখে পড়েছে। মানুষ যে এতটা নিষ্ঠুর হতে পারে তাহা আমার আগে জানা ছিল না।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে ওই স্বাস্থ্যকর্মীর মা বলেন, আমার স্বামী নেই। আমার এই মেয়েটার আয়ে আমার সংসার চলে। আমার মেয়েটির এখনো বিয়ে হয়নি। তাকে এভাবে একটি পুকুরের মধ্যে ঝুপড়ি ঘরে রাখা হয়েছে। আমার মেয়েটির যদি কিছু হয়ে যায় তাহলে এর দায় কে নেবে? এলাকার আওয়ামী লীগ নেতা প্রশান্ত বাড়ৈ চাপ সৃষ্টি করে আমার মেয়েটিকে এখানে রেখেছে। আমি প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
আওয়ামী লীগ নেতা প্রশান্ত বাড়ৈর কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, এলাকাবাসীর সকলের সিন্ধান্তে ওই নারী স্বাস্থ্যকর্মীকে পুকুরের মধ্যে ঝুপড়ি ঘর তৈরি করে সেখানে রাখা হয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম মাহফুজুর রহমান বলেন, বিষয়টি অত্যন্ত অমানবিক। এই স্বাস্থ্যকর্মীকে এলাকাবাসী এভাবে না রেখে আমাদের জানালে তাকে আমরা প্রতিষ্ঠানিক হোম কোয়ারেন্টিনে রাখতে পারতাম। আমরা এই স্বাস্থ্যকর্মীকে ওখান থেকে এনে হোম কোয়ারেন্টিনে রাখার ব্যবস্থা করব। অপরদিকে এই নারী স্বাস্থ্যকর্মীকে যারা এভাবে ঝুপড়ি ঘরের ভেতর রেখেছে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতার নির্দেশে তালপাতা দিয়ে বানানো একটি ঝুপড়ি ঘরে কোয়ারেন্টাইনে রাখা ঢাকাফেরত ওই নারী স্বাস্থ্যকর্মীকে উদ্ধার করেছে পুলিশ।
এদিকে সোমবার দুপুরে তাকে উদ্ধার করে বাড়ি নিয়ে যায় পুলিশ। পরে তাদের ঘরের পাশে একটি ঘর তুলে সেখানে রাখা হয় স্বাস্থ্যকর্মীকে। এছাড়া তালপাতার সেই ঝুপড়ি ঘর ভেঙে দিয়েছে পুলিশ। কোটালীপাড়া থানা পুলিশের ওসি শেখ লুৎফর রহমান বলেন, ঝুপড়ি ঘর থেকে ওই নারীকে উদ্ধার করে তাদের ঘরের পাশে নতুন একটি ছাপরা ঘর তুলে সেখানে তাকে রাখা হয়েছে। ওই ঝুপড়ি ঘর ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে। এ ঘটনায় ওই নারী স্বাস্থ্যকর্মী অভিযোগ দিলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Comment here