ব্রেকিং নিউজ

চার দেয়ালে বন্দী মধ্যবিত্তদের কান্না শোনে না কেউঃ থমকে দাঁড়িয়েছে মানুষের জীবনযাত্রা ও আয় রোজগার

বিশেষ প্রতিবেদকঃ
দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে কর্মহীন নানা পেশার মানুষ। অভাব অনটোন দেখা দিয়েছে মধ্যবিত্ত মানুষের। বিভিন্ন জায়গা থেকে সাহায্য চেয়ে নিচ্ছেন। তবে সংসারে অভাব দেখা দিলেও কাউকে বলতে পারছেন না আবার সইতেও পারছেনা মধ্যবিত্তের মানুষেরা। এতে অসহায় হয়ে চার দেয়ালে বন্দী হয়ে পড়েছে মধ্যবিত্তদের কান্না। পিরোজপুর সদর সহ সমগ্র উপজেলায় চলছে লকডাউন। করোনাভাইরাস সংক্রমণরোধে মানুষ ঘরবন্দী হয়ে পড়েছে, রাস্তা-ঘাট জনশূন্য। থমকে দাঁড়িয়েছে মানুষের জীবনযাত্রা ও আয় রোজগার।
এ সময় সরকারি-বেসরকারি সংস্থা ও বিত্তবানরা শ্রমজীবী মানুষের মাঝে ত্রাণ দিলেও ঘরে বন্দী হয়ে পরেছে মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো। তাদের অনেকের সংসার অচল হয়ে পড়লেও তারা মুখ ফুটে কাউকে বলতেও পারছেন না, তাদের নিয়ে কেউ ভাবছেও না। সরকার মধ্যবিত্তদের বাড়ি বাড়ি ত্রাণ দেয়ার কথা বললেও এখন পর্যন্ত কেউ ত্রাণ নিয়ে তাদের বাড়িতে যায়নি বলে জানা গেছে।
কয়েকটি মধ্যবিত্ত পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাদের অনেকের ঘরে এখন খাবার নেই, ত্রাণ যারা দিচ্ছে অধিকাংশ ত্রাণদাতারা ছবি তোলা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ায় তারা ত্রাণ নিতে যেতে পারছেন না লোক লজ্জার ভয়ে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মধ্যবিত্তদের মধ্যে এমন অনেকে আছে যারা দিন আনে দিন খায়, অথবা যাদের নিজেদের একটা ব্যবসা আছে অথবা চাকরি করে। করোনার এই সংকটের সময়ে তাদের সকল প্রকার আয় বন্ধ। কিন্তু আয় বন্ধ হলে কি হবে, খরচ ঠিকই হচ্ছে তার গতিতে। বাজার খরচ, ওষুধের খরচ, বাসা-ভাড়া, বিদ্যুৎ বিল, পানির বিল, এটা ওটা মিলিয়ে প্রতিনিয়ত খরচ তার গতিতে ঠিকই যাচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনেচ্ছুক এক ভূক্তভোগী বলেন, ‘এই সময়ে বাংলাদেশের উচ্চবিত্তরা আল্লাহর রহমতে ভালোই আছে, কারণ তাদের কোন অভাব নেই। অন্যদিকে নিম্নবিত্তদের সাহায্য করার জন্য দেশে মানুষ এবং সংস্থারও অভাব নেই। সমস্যা হল আমাদের মতন মধ্যবিত্তদের নিয়ে। আমাদের সাহায্য করার জন্য কেউ এগিয়ে আসে না, আবার আমরা রাস্তায় দাঁড়িয়ে সাহায্য নিতেও পারিনা। আমাদের কাছে পেটের ক্ষুদার চেয়ে নিজের আত্মসম্মানটাই বড়। আমরা না পারে ভিক্ষা করে খেতে আর না পারি অন্যের হক মেরে খেতে। ন্যায়-নীতি, সততা, আত্মসম্মান নিয়ে বাঁচা এই আমরা মধ্যবিত্তরা আজকে ভালো নেই। এখন চিন্তায় আমরা মাথায় হাত দিয়ে বসে আছি। না পারছি বলতে, না পারছি সইতে। এমন অবস্থায় কি করবে,কি করা উচিত হবে ভেবে উঠতে পারছিনা আমরা।’
মাস শেষে এমনিতেই মধ্যবিত্তদের হাতে টাকা পয়সা থাকে না আর লক ডাউনের এই সময়ে আরো খারাপ পরিস্থিতিতে আছে তারা। কিছু দিন পরই তাদের ঘরের খাবার শেষ হয়ে যাবে হয়তোবা কারোর শেষও। কিন্তু তাতে কি, এরা তো হাত পাতারও মানুষ না। আরো কিছু দিন ডাল-ভাত খেয়ে বাঁচবে তবুও কারোর কাছে হাত পাতবে না। বুকফাটা আর্তনাত আর চাপা কান্নাই এখন মধ্যবিত্তদের একমাত্র অবলম্বন।
এই মধ্যবিত্তরা চাইলেও ১/২ মাস উপার্জন না করে চলতে পারবেনা। আবার নিম্নবিত্ত বা গরীবদের মত অন্যের কাছে হাতও পাততে জানেনা। পারেনা লাইনে দাড়িয়ে কিছু আনতে। এই শ্রেণীটার লজ্জাবোধ সবসময়ই বেশি। নৈতিক মূলবোধ, আদর্শ কিংবা সামাজিক কারণে সবসময়ই নিজেদের গুটিয়ে রাখে এরা।

জনপ্রিয় লেখক হুমায়ূন আহমেদ বলেছেন, “মধ্যবিত্ত পরিবারের মানুষগুলোই ধরণীর আসল রূপ দেখতে পায়।” ঠিকই বলেছেন তিনি, পৃথিবীর এই শ্রেণীর মানুষ গুলোর কষ্ট একমাত্র ওই শ্রেণীর মানুষ ছাড়া আর কেউ জানে না। সমাজে এই মধ্যবিত্ত মানুষগুলো নীরবে, নির্ভিতে, নিঃশব্দে, নিরালাই রয়ে যাবে। কখনও কেউ জানবেনা, কেমন আছে তারা, কি খেয়ে দিন কাটাচ্ছে তারা! মধ্যবিত্ত পরিবার “না পারছে কইতে, না পারছে সইতে” কষ্টের মাঝে বেশির ভাগ পরিবার।
প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা গরীব অসহায় এবং বড়লোক সহ গার্মেন্টস শ্রমিকদের জন্যও প্রণোদনা ঘোষণা করেছেন। এসব উদ্যোগ অব্যশই প্রশংসনীয় বটে। কিন্তু মধ্যবিত্তরা? এদের কি হবে, কেমন করে বাাঁচবে? মধ্যবিত্ত পরিবার “না পারছে কইতে, না পারছে সইতে” কষ্টের মাঝে বেশির ভাগ পরিবার। প্রতিটি পরিবারে রয়েছে চাপা কান্না আর নিরব হাহাকার!

Comment here