মানবতা

চাকরির প্রথম রেশন অসহায়দের দিলেন এসআই আসাদঃ দিনাজপুরের কোতয়ালী থানায় কর্মরতঃ বাড়ি-লালমনিরহাট

অনলােইন ডেস্কঃ
করোনায় দিশেহারা দেশের কর্মহীন, অসহায়, দিনমজুর মানুষ। বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া এই মহামারিতে অসহায় এসব মানুষের পাশের দাঁড়াচ্ছেন অনেকেই। সরকারের পক্ষ থেকে নেওয়া সহায়তা কার্যক্রমের বাইরেও কেউ সাংগঠনিকভাবে কেউ বা ব্যক্তি উদ্যোগে পাশে দাঁড়াচ্ছেন। এমনই একজন পুলিশ সদস্য মো. আসাদুজ্জামান আসাদ। শিক্ষানবিশ এই উপ-পরিদর্শক (এসআই) তার চাকরি জীবনের প্রথম তিনমাসের রেশন কর্মস্থলের আশপাশের খেটে খাওয়া মানুষের হাতে তুলে দিয়েছেন।
দিনাজপুরের কোতয়ালী থানায় কর্মরত আসাদুজ্জামান আসাদের ভাষ্য, জীবনে বেঁচে থাকলে অনেক রেশন তুলতে পারব। কিন্তু প্রথম রেশন তুলে মহামারির সময়ে কয়েকটি পরিবারে যে হাসি ফোটাতে পেরেছি এই সুযোগ আরো পাবো না।
আসাদুজ্জামানের গ্রামের বাড়ি লালমনিরহাট। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগে মাস্টার্স শেষ করে যোগ দেন বাংলাদেশ পুলিশে। ৩৭ ব্যাচে নিয়োগ পাওয়া এই উপ-পরিদর্শক ট্রেনিং শেষে গত ফেব্রুয়ারিতে দিনাজপুরে যোগ দেন।
ছাত্রজীবনেও অবশ্য স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন করে মানুষের পাশে দাঁড়াতেন আসাদ এবং তার বন্ধুরা। স্বপ্ন ছিলো চাকরি জীবনেও সাধ্যমত চেষ্টা করবেন মানুষের পাশে দাঁড়ানোর। যদিও পুলিশে চাকরি হওয়ার পর অনেকেই নেতিবাচক নানা কথা বলেছেন তাকে। তবে কাজে যোগ দেওয়ার পর থেকেই চিন্তা করেছেন ইতিবাচক কাজ করে পুলিশ সম্পর্কে নেতিবাচক ভাবনা বদলে দিবেন।
বর্তমানে একজন পুলিশ সদস্য মাসে ১১ কেজি চাল, ১২ কেজি আটা, আড়াই কেজি তেল, সোয়া দুই কেজি চিনি ও তিন কেজি ডাল রেশন হিসেবে পান। পুলিশের এই উপ-পরিদর্শক চাকরির প্রথম তিনমাসের পুরো রেশন একত্র করে সাতটি পরিবারের হাতে তুলে দিয়েছেন। শুধু তাই নয়, প্রথম বেতন তোলার পর সেখান থেকেও কিছু নগদ অর্থ কয়েকজনকে দিয়েছেন যারা করোনায় কষ্টে জীবনযাপন করছেন।
আসাদ বলেন, ‘অনেকেই অনেক বেশি কিছু করছেন। আমি আমার সামান্য সামর্থ দিয়ে কয়েকটি পরিবারে হাসি ফোটাতে পেরেছি এটা অন্যরকম আনন্দের। পুলিশ সম্পর্কে অনেকে নেতিবাচক কথা বলেন। তাদের বলবো বিপদে আমরা মানুষের পাশে থাকি।’তার এই কাজ দেখে আরেক সহকর্মীও রেশন অসহায় মানুষের হাতে তুলে দেবেন বলেও জানিয়েছেন আসাদ।
নিজের ফেসবুকে একটা পোস্ট দিয়ে আসাদুজ্জামান বলেন, ‘ইচ্ছা ছিলো আমার চাকরি জীবনের প্রথম রেশন বাবা-মায়ের কাছে পাঠাবো। কিন্তু করোনার কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে মন সায় দিল না। মায়ের সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করি। পরিকল্পনা করি আশেপাশের কয়েকজনের মাঝে এসব উপহার হিসেবে দিলে তারা কিছুটা উপকৃত হবে। তাই প্রথম তিনমাসের রেশন কয়েকজনকে গিফট করলাম। আসুন এই ক্রান্তিলগ্নে যে যার মত সামর্থ অনুযায়ী পাশের জনকে সহযোগিতা করি। ইনশাআল্লাহ এই পরিস্থিতি কেটে যাবে। পৃথিবী আবার আগের মত চাঞ্চল্যতা ফিরে পাবে।’
অনেকেই তার এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে মন্তব্য করেছেন ফেসবুকে।

Comment here