বিশেষ প্রতিবেদন

কে কার অলংকার!

অনলাইন ডেস্কঃ
জামালপুর ডিসি অফিসে নারী কেলেঙ্কারির ঘটনার পর চারদিকে নানা আলোচনা চলছে। এ ব্যাপারে সাধারণ মানুষের মন-মানসিকতায় বিভক্তি দেখা গিয়েছে। অনেকে ঘটনার জন্য পুরুষ চরিত্রকে দায়ী করছেন, আবার কেউ কেউ দায়ী করছেন সংশ্লিষ্ট নারীকে। তবে সমাজের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা এ ধরনের ঘটনার জন্য এক পক্ষকে দায়ী না করে উভয় পক্ষকে টেনে আনছেন। তারা বলছেন, ঘটনাগুলো একতরফা নয়।
সমাজবিদরা বলছেন, বিভিন্ন ধরনের কেলেঙ্কারির ঘটনা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এসব ঘটনায় দুই পক্ষের সম্মতি ছিল। আর এক পক্ষের সম্মতি ছাড়া যে ঘটনাগুলো ঘটেছে, সেগুলো অতি দ্রুত প্রকাশ হয়ে পড়েছে। জামালপুরের ঘটনাটিও এর ব্যতিক্রম নয়।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক দেবাশীষ কুমার কুন্ডু বলেন, প্রাপ্তবয়স্ক দুই জনের মধ্যে যে কোনো ধরনের সম্পর্ক হতেই পারে। তবে আমাদের দেশে এ সম্পর্কগুলোকে ধর্মীয় নৈতিকতা এবং সামাজিক মূল্যবোধ থেকে বিচার করা হয়। তিনি বলেন, আমাদের সামাজিক মূল্যবোধ পশ্চিমা বিশ্বের মতো নয়। ধর্ম এবং সনাতনী মূল্যবোধ দিয়ে এখানকার সমাজ এখনো চলছে। নীতি-নৈতিকতাও এখানে বড়ো করে দেখা হয়।
অধ্যাপক দেবাশীষ আরো বলেন, আমাদের সমাজে এ ধরনের ঘটনা সবসময় ছিল। স্বার্থের কারণেই সাধারণত এসব সম্পর্ক গড়ে উঠে। অতীতে ঘটনাগুলো তেমন প্রকাশ না পেলেও এখন সোশ্যাল মিডিয়ার কারণে এটি দ্রুত আমাদের সামনে চলে আসছে। আর ব্যক্তিবিশেষেও একই ধরনের ঘটনার ভিন্ন ভিন্ন প্রতিক্রিয়া হয়। যেমন সাধারণ মানুষের সঙ্গে যদি এ ধরনের ঘটনা ঘটে তাহলে তেমন প্রতিক্রিয়া হয় না। আর ঘটনার চরিত্র যদি প্রভাবশালী হয় তাহলে সেটার প্রতিক্রিয়া হয় বেশি।
সচিবালয়, সরকারি-বেসরকারি ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বিমা কোম্পানি, বিভিন্ন অফিস, পরিবহন ব্যবসায়ী, শিল্প-কলকারখানাসহ সর্বত্রই নারীদের নানাভাবে ব্যবহার করা হয়। সুন্দরী নারীদের প্রতি অধিকাংশ পুরুষের দুর্বলতা থাকবে এটা স্বাভাবিক। আর এই সুযোগ কাজে লাগাচ্ছে অনেকে। বড়ো ব্যবসায়ীরাও সুন্দরী নারীদের চাকরি দিয়ে ব্যবহার করছেন। বিভিন্ন ব্যাংক, বিমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান তাদের আমানত সংগ্রহ করার জন্য সুন্দরী নারীদের ব্যবহার করে থাকে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, বিশেষ করে আবাসন কোম্পানিগুলো তাদের প্লট-ফ্ল্যাট বিক্রির জন্যও নারীদের নিয়োগ দিয়ে থাকে।
জনপ্রশাসনের কেন্দ্রবিন্দু সচিবালয়ে অযাচিত তদবিরকারীদের আনাগোনা আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। তাদের তালিকায় অন্তত ৬৪ জন ‘সুন্দরী’ নারীও রয়েছেন। বিষয়টি বিভিন্ন সময়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। এসব তদবিরবাজ চাকরি, বদলি থেকে শুরু করে নানা তদবিরের মাধ্যমে তাদের ফায়দা হাসিল করছেন। নিয়োগপ্রাপ্ত সুন্দরী নারীরা এক মন্ত্রণালয়ের পাশ নিয়ে একাধিক মন্ত্রণালয়ে গমন করছেন। অযাচিত তদবির করছেন। তাদের সময় দিতে গিয়ে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে। আবার কোনো কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী তদবিরবাজদের সঙ্গে সখ্য গড়ছেন। বিশেষ করে তদবিরবাজ ‘সুন্দরী’ নারীদের অনেকে কর্মকর্তাদের সঙ্গে দীর্ঘ আড্ডা দেন।
তদবিরবাজ ‘সুন্দরী’ নারীরা বাহারি পোশাক পরে প্রতিদিন দুপুর ২টায় সচিবালয়ে ঢোকেন। অফিস শেষ হওয়ার পর বের হন। সারাদিন তারা এক মন্ত্রণালয় থেকে আরেক মন্ত্রণালয়ে যান। তাদের সঙ্গে আবার বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিব, অতিরিক্ত সচিব, যুগ্মসচিব, উপসচিব থেকে শুরু করে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দহরম-মহরম সম্পর্ক। এসব কর্মকর্তা-কর্মচারী আবার ‘সুন্দরী’ তদবিরবাজদের সচিবালয়ে প্রবেশের পাশ প্রদান করে থাকেন।
এদের কারণে অনেক সময় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের দৈনন্দিন কাজ ব্যাহত হচ্ছে। এসব তদবিরবাজ ‘সুন্দরী’ নারী আবার ক্ষমতাসীন দলের বিভিন্ন পদ-পদবির পরিচয় দিয়ে সচিবালয়ে ঘুরে বেড়ান। সচিবালয়ে কর্মরত পুলিশ সদস্যদের কেউ কেউ তাদের চেনেন। তবে তাদের ব্যাপারে কথা বলার সাহস পান না। রাজধানীর পাশাপাশি জেলা পর্যায়েও বিভিন্ন অফিসে ব্যবহার করা হচ্ছে সুন্দরী নারীদের। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজের অন্যতম হাতিয়ার হলো সুন্দরী নারী। টাকা দিয়েও যাদের ম্যানেজ করা যায় না, সুন্দরী নারী পাঠিয়ে তাদের কাছ থেকে কাঙ্ক্ষিত কাজ ভাগিয়ে নেওয়া সহজ হয়ে যায়।
এদিকে ছিনতাই, চুরি, অপহরণ, প্রতারণা, অস্ত্র বহন, মাদক বিক্রি ও বহন, নানা জালে ফেলে প্রতারণা, নকল টাকা বহনসহ বিভিন্ন ভয়ংকর অপরাধে জড়িয়ে পড়ছেন সুন্দরী নারীরা। অপরাধ বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, নারীদের দিয়ে অপরাধ করানো তুলনামূলক নিরাপদ। সম্প্রতি গোয়েন্দা পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হওয়া বেশ কয়েকজন সুন্দরী নারী অপরাধীর কাছ থেকে পাওয়া গেছে চাঞ্চল্যকর কিছু তথ্য। মানুষকে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে টাকাপয়সা হাতিয়ে নেওয়াসহ খুনের মতো অপরাধে জড়িত হচ্ছেন তারা। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাদের রয়েছে শক্তিশালী নেটওয়ার্ক।

Comment here