পিরোজপুর সদরব্রেকিং নিউজ

করিমুন্নেছা বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ৮ মাস স্কুলের বিলে সই করেন না ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি লায়লা পারভিন

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
পিরোজপুর জেলা শহরের করিমুন্নেছা বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে আট মাস ধরে বেতন-ভাতায় স্বাক্ষর করেন না ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি লায়লা পারভিন, যিনি এখানকার সাবেক সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতা এ কে এম এ আউয়ালের স্ত্রী। তার এমন অসহযোগিতায় শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা একদিকে যেমন বিপাকে পড়েছেন, অন্যদিকে প্রতিষ্ঠানটির সার্ভিস বিলের টাকাও পরিশোধ করতে পারছে না কর্তৃপক্ষ। এ অভিযোগে তাকে সরকারের পক্ষ থেকে কারণ দর্শানোর নোটিসসহ সাত দিনের মধ্যে বেতনভাতা দেওয়ার জন্য লিখিত নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এতেও সুফল হয়নি। এ বিষয়ে বিস্তারিত উল্লেখ করে পিরোজপুরের জেলা প্রশাসক গত ৮ সেপ্টেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিবের কাছে চিঠি দিয়েছেন। চিঠিতে তিনি বিকল্প উপায়ে বেতনভাতা ও অন্যান্য আর্থিক বিষয় পরিচালনার প্রস্তাব করেছেন। এদিকে লায়লা পারভিন বলছেন, প্রধান শিক্ষক আব্দুল হালিম হাওলাদার দুর্নীতিগ্রস্ত ও প্রভাবশালী মহলকে সঙ্গে নিয়ে স্কুলে তাকে প্রবেশ করতে দিচ্ছেন না।

জানতে চাইলে পিরোজপুরের জেলা প্রশাসক আবু আলী মো. সাজ্জাদ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রায় ৮ মাস ধরে বেতনভাতা পাচ্ছেন না শিক্ষকরা। সেখানে সার্ভিস বিলও দিতে পারছেন না। সব মিলিয়ে প্রতিষ্ঠানের খুব খারাপ অবস্থা যাচ্ছে। তাই বিস্তারিত উল্লেখ করে আমি মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছি।’

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ‘পিরোজপুর করিমুন্নেছা বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের জটিলতা নিয়ে জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে চলতি মাসের ৮ তারিখ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে একটি চিঠি আসে। সংশ্লিষ্ট সচিবকে লেখা চিঠিতে জেলা প্রশাসক বলেন, বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি লায়লা পারভিনকে বারবার অনুরোধ করার পরও গত আট মাস ধরে শিক্ষক-কর্মচারীদের বিলে স্বাক্ষর করেননি। আট মাস ধরে স্কুলের শিক্ষক ও কর্মচারীরা বেতনভাতা না পেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। এছাড়া স্কুলের আনুষঙ্গিক ব্যয় যেমন- পানি, বিদ্যুৎ, টেলিফোন বিল বকেয়া পড়েছে। শিক্ষার্থীদের নিবন্ধন ও পরীক্ষা সংক্রান্ত ব্যয় কাজে বিঘ্ন ঘটছে। এর ফলে শিক্ষা কার্যক্রমও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এতে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের মাঝে ব্যাপক উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির প্রতি অনাস্থা জানিয়ে সব শিক্ষক-কর্মচারী ও ম্যানেজিং কমিটির সদস্যরা লিখিত আবেদন দিয়েছেন।’

জেলা প্রশাসক চিঠিতে বলেন, ‘এ প্রতিষ্ঠানের বর্ণিত জটিলতা নিরসন ও বিদ্যালয়ের সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা এবং আনুষঙ্গিক বিল-ভাউচারের প্রতিস্বাক্ষরের জন্য জেলা প্রশাসক অথবা জেলা শিক্ষা অফিসারকে ক্ষমতা প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ করা হলো।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে লায়লা পারভিন সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানটির প্রধান শিক্ষক আব্দুল হালিম হাওলাদারকে বরখাস্ত করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎসহ ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। এখন প্রধান শিক্ষক উচ্চ আদালত থেকে একটি আদেশ নিয়ে স্কুলে যোগদান করেছেন। কিন্তু তিনি ম্যানেজিং কমিটির পক্ষ থেকে কাউকে কিছু জানাননি।’ তিনি আরও বলেন, প্রধান শিক্ষক আব্দুল হালিম হাওলাদার প্রভাবশালী মহলকে সঙ্গে নিয়ে স্কুলে তাকে প্রবেশ করতে দিচ্ছেন না।

Comment here