কাউখালী

একজন বীর সেনানীর পৃথিবী থেকে প্রস্থানঃ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
পিরোজপুরের কাউখালী উপজেলার কেউন্দিয়া গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক সহকারি কমান্ডার মো. হাবিবুর রহমান (৮৭) বৃহস্পতিবার দুপুরে বার্ধক্যজনিত কারণে কেউন্দিয়া গ্রামে নিজ বাড়ীতে ইন্তেকাল করেন ইন্তেকাল করেছেন।(ইন্না-লিল্লাহ….. রাজেউন)। ওই দিনই রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় জানাযা শেষে পারিবারিক গোরস্থানে দাফন করা হয়। মৃত্যুকালে স্ত্রী ৯ ছেলে ও ৩ মেয়ে রেখে গেছেন।
বিভিন্ন সুত্রে জানাযায়, কাউখালী থানার কেউন্দিয়া নিবাসী হাবিবুর রহমান স্বাধীনতা সংগ্রামে অপূর্ব সাহসের পরিচয় দিয়েছেন। ১৯৫৮ সালে তিনি সেনাবাহিনীতে যোগ দেন এবং মুক্তিযুদ্ধের পূর্বে তিনি আর্মি থেকে অবসর গ্রহণ করেন। বরিশাল পতনের পর তিনি একটি রাইফেল নিয়ে দল গঠন করেন। স্বাধীনতার পর তিনি ১০০০ অস্ত্র জমা দেন। কেউন্দিয়ার হাবিবুর রহমান, পনা ও সুলতান কাজী একটি দল গঠন করেন। কেউন্দিয়া স্কুলে মুক্তিবাহিনীর ট্রেনিং হতো। কেউন্দিয়া গ্রামের অনেক বীর সন্তান মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেয়। হাবিবুর রহমান ৯ আগস্ট কাউখালী থানা আক্রমণ করে অস্ত্র নিয়ে নেয়। তারা ক্যাপ্টেন শাহজাহান ওমরের সাথে বানারিপাড়া থানা আক্রমণ করে। কাউখালী কেউন্দিয়ায় মুক্তিবাহিনীর ক্যাম্প থাকায় ঝালকাঠি হতে ৮০ জন এবং কাউখালী হতে ১০০ জন পাকসেনা ২২ সেপ্টেম্বর কেউন্দিয়া গ্রাম আক্রমণ করে। তখন পনার ক্যাম্প জুলুহারে এবং কুতুবকাঠিতে ছিল। পূর্বে তারা ক্যাম্প স্থানান্তরিত করে। পাকবাহিনীর আক্রমণের সংবাদ শুনে আবদুল হাই পনা ১৮ জন এবং হাবিবুর রহমান ৪২ জন মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে ২২ সেপ্টেম্বর বেলা ২:৩০ মিনিটে পাকবাহিনীকে গেরিলা পদ্ধতিতে আক্রমণ করে। চার দিকে খাল, ধানক্ষেত এবং মাঠ ভর্তি পানি। পাকসেনারা মুক্তিবাহিনীর আক্রমণ প্রতিহত করতে সম্পূর্ণ ভাবে ব্যর্থ হয়। এ যুদ্ধে ১৭ জন পাকসেনাসহ ৩০ জন নিহত হয়। তিনজন বেলুচ সেনা ধরা পড়ে এবং তাদের মুজিবনগরে পাঠিয়ে দেয় হয়। তারা বাংলাদেশ বেতার হতে বক্তব্য পেশ করে। বাকি সৈন্যরা কোন রকমে পালিয়ে কাউখালী যায়। হানাদার বাহিনীর নিকট হতে মুক্তিযোদ্ধরা ৩টি এলএমজি, ৬টি এসএমজি, দু’ইঞ্চি মর্টার ও এনার্গা দখল করে।

কেউন্দিয়ার যুদ্ধে যারা অংশগ্রহণ করেছিলেন তারা হলেন হাবিবুর রহমান, আবদুল হাই পনা, কাজী সুলতান মাহমুদ, আলী হোসেন, আশ্রাব আলী, মোবারেক, ছত্তার মোল্লা, মতিয়ুর রহমান, হিরন, শাহ আলম, খাদেম হোসেন, হারুন-অর-রশীদ, আলমগীর হোসেন প্রমুখ। হাবিবুর রহমানের দলের সাথে আয়রন জয়কুল গ্রামে পাক বাহিনীদের সাথে সংঘর্ষ হয়। এখানে মাজেদ হোসেন হাওলাদার শহীদ হন। ৯ ডিসেম্বর হাবিবুর ও তার দল কাউখালী থানা মুক্ত করে। উচ্চারিত হলো হাজারো কণ্ঠে ‘জয় বাঙলা- তোমার নেতা আমার নেতা- শেখ মুজিব, শেখ মুজিব’।

Comment here