স্বরূপকাঠি প্রতিনিধিঃ
“আমি ২৫ বছর ধরে মাংস বিক্রির কাজ করি। কোনোদিন দেখিনি উপজেলা থেকে কোনো ডাক্তার এসে জবাইয়ের জন্য আনা গরু বা ছাগল রোগমুক্ত কিনা তা স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেছে। আমাদেরকে স্বরূপকাঠি উপজেলা অফিস থেকে নির্দেশনা দেয়া আছে গরু বা ছাগল জবাইয়ের ২৪ ঘন্টা পূর্বে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানোর জন্য। কিন্ত একটি গরু নিয়ে সন্ধ্যা নদী পার হয়ে উপজেলা প্রাণি সম্পদ অফিসে যেতে আসতে প্রায় ৫শ’ টাকা খরচ হয়। কিন্ত দেখা যায় এ টাকা একটা গরুর মাংশ বিক্রি করে অনেক সময় আমরা মুনাফাও করতে পারিনা। এসব কারণেই পশু নিয়ে প্রাণি সম্পদ অফিসে যাওয়া হয়না।”- কথাগুলো বলছিলেন পিরোজপুরের স্বরূপকাঠির সন্ধ্যা নদীর পশ্চিম পাড়ের মাংস বিক্রেতা খাইরুল। তিনি আরো বলেন, বর্তমানে হুজুর দিয়ে কোনো পশু জবাই করা হয়না। অজু করে আল্লাহু আকবার বলে নিজেরাই পশু জবাই করি। সন্ধা নদী বিধৌত স্বরুপকাঠির পশ্চিম পাড়ে ৯ জন গরুর মাংস ও ৪ জন ছাগলের মাংস বিক্রেতা রয়েছে। এছাড়া নদীর পূর্ব পাড়ে উপজেলা অফিস ও থানা সংলগ্ন এলাকায় ৬ জন গরুর মাংস এবং ২ জন লাইসেন্সকৃত ছাগলের মাংস বিক্রেতা রয়েছে। তাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, স্বরূপকাঠি প্রতিদিন গড়ে ১০/১২ টি গরু ও ৫/৬ টি ছাগলের মাংস বিক্রি হয়।
মাংস বিক্রয় ও প্রক্রিয়াজাতকরণ বিধিমালা ২০১১ আইনে এসব গরু ও ছাগল জবাই করার পূর্বে উপজেলা প্রাণি সম্পদ অফিসের ডাক্তার দিয়ে পশু রোগাক্রান্ত বা গর্বাবস্থায় কিনা তা পরীক্ষা করার কথা থাকলেও কোনোদিনই এ নিয়ম পালন হয়নি বলে জানান একাধিক মাংস বিক্রেতা।
মাংস বিক্রেতা রুবেল বলেন, ঈদ উপলক্ষে স্বরূপকাঠিতে প্রায় ৩শ’ গরু ও ২০ থেকে ২৫ টি ছাগলের মাংসের চাহিদা থাকে। এর কোনোটিই কখনই জবাইয়ের পূর্বে বা পরে পরীক্ষা করা হয়না।
তবে উপজেলা প্রাণি সম্পদ অফিসার ডাঃ মো. শওকত আলী বলেন, পূর্বে কি হয়েছে জানিনা। তবে আমি এখানে যোগদানের পর মাংস বিক্রেতাদের নিয়ে একাধিকবার ওয়ার্কসপের আয়োজন করেছি। ওয়ার্কসপে তাদেরকে বিভিন্ন ধরনের ধারনা দেয়া হয়েছে। এসময় বার বার তাদেরকে পশু জবাইয়ের আগে অফিস থেকে রোগমুক্ত ছারপত্র নেয়ার জন্য বলা হয়েছে। কয়েকটি পশু নিয়ে কয়েকদিনই কয়েকজনে ছারপত্র নিয়েছে। কিন্ত এর পর আর কেহ আসেনা। তবে নদীর পশ্চিম পাড়ের মিয়ারহাট ও ইন্দুরহাট থেকে কেহই আসেনা। এ কর্মকর্তা আরো বলেন, অফিসে লোক সল্পতা ও যাতায়াত সমস্যার কারণে জবাইয়ের জন্য আনা পশু যাচাই করা হয়না। তবে কেহ নিয়ে আসলে আমরা বিনা ফিতে তা পরীক্ষা করে ছারপত্র দেই। এদিকে একাধিক মাংস ক্রেতা অভিযোগ করেন, এ অঞ্চলে ভোক্তাদেরকে মাংস ওজনে ঠিক ভাবে দেয়া হয়না। এমনকি রোগাক্রান্ত গরু ও ছাগল এখানে জবাই করা অনেকটাই ওপেন সিক্রেট।
এ ব্যাপারে মাংস বিক্রেতা রুবেল বলেন, যারা ডিজিটাল পালা ব্যবহার করেনা তাদের ওজনে কিছুটা তারতম্য হতে পারে। তবে রোগাক্রান্ত গরু মিয়ারহাটে জবাই করা হয়না।
স্বরূপকাঠিতে জবাইয়ের জন্য আনা পশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা হয়না!

Comment here