জাতীয়

রাজউকের কর্মকর্তাদের দায়িত্বশীল হতে বললেন গণপূর্তমন্ত্রী

রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উদ্দেশে গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বলেছেন, একজন মানুষও যেন সেবা নিতে এসে রাজউক থেকে কষ্ট নিয়ে বেরিয়ে না যায়। কারণ সেই কষ্ট ৩০ লাখ শহীদের চেতনার পরিপন্থী, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের পরিপন্থী, অবিরাম পরিশ্রম করা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরিশ্রমের পরিপন্থী।

বুধবার (২৮ আগস্ট) রাজউকের অডিটোরিয়ামে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৪তম শাহাদাতবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আয়োজিত জাতির পিতার জীবন, কর্ম ও আদর্শ নিয়ে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় মন্ত্রী এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা থেকে কখনও বিচ্যুত হবেন না। আমি চাই আরও স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও দায়িত্বশীলতার সঙ্গে আপনারা কাজ করবেন। মনে রাখবেন, সাধারণ মানুষের ট্যাক্সের টাকায় আপনাদের বেতন দেয়া হয়। আসুন, রাজউক পরিবারকে একটা দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী, জনবান্ধব প্রতিষ্ঠানে রূপান্তর করি। রাজউকের গৌরবকে সকলে মিলে পুনরুদ্ধার করি।

গৃহায়নমন্ত্রী বলেন, ‘স্বাধীনতাবিরোধী ও প্রতিক্রিয়াশীলরা মিলে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড সংগঠিত করেছে। আর বঙ্গবন্ধুর খুনিদেরকে অগণতান্ত্রিক সরকারগুলো পুনর্বাসন করেছে। জিয়াউর রহমান নিজে বঙ্গবন্ধু হত্যার উপকারভোগী এবং মদদদাতা। তিনি বঙ্গবন্ধুর খুনিদেরকে দেশের বাইরে পুনর্বাসন করেছেন। আত্মস্বীকৃত খুনিদের বিচার না করে তাদেরকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করেছেন। ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্সকে (দায়মুক্তি অধ্যাদেশ) সংবিধানের অংশে পরিণত করেছেন।’

‘এরপর এরশাদ বঙ্গবন্ধুর খুনিদের সরাসরি রাজনীতিতে পুনর্বাসন ও প্রটেকশন দিয়েছেন। খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এসে বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনিদেরকে বিভিন্ন মিশনে চাকরি ও পদোন্নতি দিয়েছেন। জিয়াউর রহমান, এরশাদ ও খালেদা জিয়া একইরূপে কলঙ্কজনক অধ্যায় রচনা করে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খুনিদেরকে সকল প্রকার সুযোগ-সুবিধা দিয়ে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের কর্মীদেরকে ধ্বংস করতে সহায়তা করেছেন।’

জিয়াউর রহমান বাংলাদেশকে খুনিদের ‘অভয়ারণ্যে’ পরিণত করেছিলেন মন্তব্য করে রেজাউল করিম বলেন, ‘তার খুনের বিচার হয়নি বাংলাদেশে। খালেদা জিয়া ক্ষমতায় থেকেও স্বামী হত্যাকাণ্ডের বিচার করেননি। এমনকি তিনি খুনিদের পুনর্বাসন করেছেন, সংসদে নিয়ে এসেছেন। তিনিও আজ এতিমের টাকা অত্মসাতের মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে জেলে রয়েছেন। ২১ আগস্টের খুনের দায়ে, দুর্নীতির দায়ে সাজাপ্রাপ্ত তারেক রহমান বিদেশে আশ্রয় নিয়েছেন, বিদেশে টাকা পাচার করেছেন, মনোনয়ন বাণিজ্য করে টাকা আয় করেছেন।’

‘অপরদিকে, বঙ্গবন্ধুর রক্ত ও আদর্শের উত্তরসূরি শেখ হাসিনা সকল দেশি-বিদেশি চাপ, ঝুঁকি ও ভয় উপেক্ষা করে মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের অপরাধের বিচার করে এবং বিচারের রায় কার্যকর করে বাঙালি জাতিকে ১৯৭১ সালের কলঙ্কের দায় থেকে মুক্ত করেছেন। খুনিদের ফাঁসির রায় কার্যকর করে প্রমাণ করেছেন বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশে অপরাধ করে অপরাধীর দায়মুক্তি চলবে না।’

রাজউকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উদ্দেশে মন্ত্রী বলেন, ‘আওয়ামী লীগ না করলেও যে দলই করুন না কেন মনে রাখবেন, আমাদের অস্তিত্বের উৎস মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাংলাদেশ। যেখানে ধনী-দরিদ্র বৈষম্য থাকবে না, যেখানে সাম্প্রদায়িকতা থাকবে না। এই বাংলাদেশে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নয়নের মহাসড়কে আমরা পৌঁছেছি। এটাকে ধরে রাখতে সততার সাথে নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করতে হবে এবং খুনি ও প্রতিক্রিয়াশীলদের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।’

তিনি বলেন, ’৭৫-এর খুনিদের নতুন প্রজন্ম যেন আবার জন্ম নিতে না পারে। এই খুনিরা একেক সময় একেক নামে আবির্ভূত হলেও তাদের লক্ষ্য একই।’

তিনি আরও বলেন, ‘বারবার শেখ হাসিনা খুনিদের লক্ষ্যে পরিণত হচ্ছেন। কারণ, তার ভেতরে আছে বঙ্গবন্ধুর প্রতিচ্ছবি, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার স্পিরিট। তার কাছে বাংলাদেশ নিরাপদ। তার কাছেই হিন্দু-বৌদ্ধ-খৃস্টান-মুসলমানের সম্প্রীতির বাংলাদেশকে খুঁজে পাওয়া যায়। তার কাছেই ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য দূর করে আধুনিক সমৃদ্ধ বাংলাদেশের স্টিয়ারিং দেখা যায়।’

অনুষ্ঠান শেষে রাজউক ভবনে আয়োজিত বঙ্গবন্ধুর ওপর চিত্রকর্ম প্রদর্শনীতে স্থান পাওয়া বিভিন্ন চিত্রকর্মের শিল্পীদের মধ্য থেকে নির্বাচিত ৫ জনকে পুরস্কার দেয়া হয়। পরবর্তীতে দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয় এবং রাজউক কর্মচারী শ্রমিক লীগের উদ্যোগে গণভোজের আয়োজন করা হয়।

রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) চেয়ারম্যান ড. সুলতান আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন রাজউকের সদস্য (পরিকল্পনা) সাঈদ নূর আলম। মুখ্য আলোচক হিসেবে বক্তব্য প্রদান করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান। বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. শহীদ উল্লা খন্দকার এবং অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন স্থাপত্য অধিদফতরের প্রধান স্থপতি কাজী গোলাম নাসির ও রাজউক কর্মচারী শ্রমিক লীগের সভাপতি মো. আব্দুল মালেক মিয়া।

গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের ঊধ্র্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ ও রাজউকের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

Comment here