নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
গ্রামীণ মেঠোপথের উন্নয়নে পিরোজপুরে মানুষের জীবনযাত্রাকে বদলে দিয়েছে। গ্রামীণ জরার্জীর্ণ রাস্তাঘাটের উন্নয়নের ফলে জেলা ও উপজেলা সদরের সাথে পল্লী অঞ্চলের মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হয়েছে। যারা সুবিধা পেয়েছে এলাকার এক সময়ের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী। বাঁশের সাঁকোর পরিবর্তে নির্মিত হচ্ছে বড় বড় আয়রন ব্রিজ। ফলে এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। কারণ এ এলাকার সবজী চাষীরা সহজে তাদের ভাসমান পদ্ধতিতে চাষকরা সবজী দেশের বিভিন্ন এলাকায় পাঠাতে পারবেন।
জেলার উত্তরের জনপদ নাজিরপুর উপজেলায় সরেজমিনে গিয়ে দেখাগেছে, দেউলবাড়ী ইউনিয়নের চলছে উন্নয়ন কর্মযজ্ঞ। জলে-ডাঙ্গায় দিন রাত প্রকৃতির সঙ্গে যুদ্ধ করে জীবন-জীবীকার চাকা সচল রাখতে যাদেরকে প্রতিনিয়ত টিকে থাকতে হয় তারাই এ জনপদের কর্মজীবী মানুষ। ভৌগোলিকভাবেই নাজিরপুর উপজেলার বিভিন্ন জনপদ নিম্নাঞ্চল হিসেবেই গড়ে উঠেছে। ফলে সারা বছরই পানিতে নিমজ্জিত থাকে এখানের পথ-ঘাট। এখানের শতকরা ৭০ ভাগই মানুষের পাঁয়ে হাটার কোন পথ নেই। যে কারণে ছোট ছোট ডিঙ্গি নৌকাই তাদের একমাত্র ভরসা ও অবলম্বন। আলাপকালে স্থানীয় নারী, পুরুষ ও স্কুল ছাত্ররা এমনটাই বলছেন।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানাযায়, উপজেলার নিম্নাঞ্চল দীর্ঘা, মালিখালী, দেউলবাড়ি ও গাঁওখালী এই চারটি ইউনিয়নের প্রত্রন্ত অঞ্চলে আয়রন ব্রীজ ও আরসিসি গার্ডার ব্রীজ নির্মাণ সমাপ্তির পরপরই শুরু হবে ১২ কি:মি গ্রামীন সড়ক নির্মাণের কাজ। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি আয়রন (লোহার) ব্রীজের কাজ প্রায় সমাপ্তির পথে।
সূত্র জানায়, হাট-বাজার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র-ছাত্রীদের যাওয়া-আসা, জরুরী স্বাস্থ্য সেবা নিতে চলাচল করতে হয় নৌকার ওপর নির্ভর করে। এখানের মানুষজনের প্রধান পেশা কৃষি। পানির ওপর কচুরিপানার উচু ঢিপ দিয়ে তৈরী করা হয় ভাসমান সবজী ও ফসলের ধাপ। অন্যদিকে, বিভিন্ন খাল-বিলের জিয়াল মাছ আহরণ করে তা বিক্রয় করে চলে তাদের সংসার ও জীবীকা।
এলজিইডি সূত্র জানায়, পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার ৯টি ইউনিয়নের গ্রামীন অর্থনীতিতে গতি সঞ্চার করতে বর্তমান সরকারের অধীনে চলছে অবকাঠামোগত নতনু নতুন ব্রীজ-কালভার্ট ও গ্রামীণ সড়ক নির্মাণ ও উন্নয়নের কাজ। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) এ উপজেলায় আই-আর-আর-ডি-পি (ইমপ্রুুভমেন্টাল রুরাল রোড ডেভলভমেন্ট প্রজেক্ট) ও বি-জি-পি (বরিশাল-ঝালকাঠি-পিরোজপুর) প্রজেক্টের আওতায় অন্তত ৫৫ কোটি টাকা ব্যায়ে এসব অবকাঠামো বাস্তবায়ন করছে।
এলজিইডি উপজেলা প্রকৌশলী মোঃ জাকির হোসেন মিয়া জানায়, মহামারি করোনার কারনে ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরে হাতে নেয়া প্রকল্পের কাজ কিছুটা বিলম্বিত হলেও বর্তমানে সে কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে, যা আগামী ২০২০-২০২১ অর্থ বছরের মধ্যে সমাপ্ত হবার কথা রয়েছে। সংশ্লিষ্ট দপ্তরের প্রকৌশলীরা বলছেন, এলজিইডির তত্বাবধানে এর পূর্বেও গ্রামীন অঞ্চলে যে সকল আয়রন ব্রীজ নির্মিত হয়েছিল বর্তমানে সেগুলোর প্লান ও ডিজাইন সম্পূর্ণ পরিবর্তন করে এখন নতুন আঙ্গিকে আরও মজবুত ও টেকসইভাবে নির্মান করা হচ্ছে, যা আগামী ৭০-৮০ বছরেও কোন ক্ষতির সম্মুখীন হবেনা, শুধুমাত্র সামান্য কিছু সংস্কার ছাড়া। উপজেলার পিছিয়ে থাকা জনপদ এভাবেই সরকারী কর্মপরিকল্পনায় এগিয়ে চলছে গোটা ইউনিয়নের পরিকল্পনা। আর্থ-সামাজিকসহ গ্রামীণ মেঠোপথের উন্নয়নের এ ছোঁয়া মানুষের জীবনযাত্রাকে বদলে দিয়েছে।
এদিকে দীর্ঘদিনের সীমাহীন দুর্ভোগ লাঘব হতে যাওয়ায় এ অঞ্চলের ব্যবসায়ীসহ সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের মুখেমুখে এখন পিরোজপুর-১ আসনের এমপি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ.ম রেজাউল করিমের নাম। মন্ত্রী শ.ম রেজাউল করিম বলেছেন, নির্বাচনী ইসতেহার অনুযায়ি এলাকার উন্নয়ন বাস্তবায়ন রাখার অঙ্গীকার করেছেন। তারই নির্দেশনায় কোন প্রকার দুর্নীতি ও অনিয়ম সহ্য করা হবে না।
Comment here