কামাল খান পিরোজপুর শহরের বাসিন্দা। মায়ের জন্য প্রতিদিন ভোরে হাসপাতালে ছোটেন। কিন্তু ১০০ শয্যার হাসপাতালে তাদের জায়গা হয় বারান্দায় নয়তো করিডোরে। তার কথা স্পষ্ট, কিন্তু ক্লান্ত, “নতুন ভবনটা তো দাঁড়ায়া গেছে। কিন্তু চালু হয় না। মায়ের অসুখ বাড়তেছে, জায়গা নাই।”
এক বছর হয়ে গেল। প্রায় ৭০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত নতুন সাততলা হাসপাতাল ভবনটি এখনো তালাবদ্ধ। কারণ—লিফট নেই। বিদ্যুৎ সংযোগ সম্পূর্ণ হয়নি। আর তাই ভবনটি স্বাস্থ্য বিভাগের কাছে হস্তান্তরও হয়নি। অথচ এই ভবনটির দিকে তাকিয়ে আছেন পিরোজপুরসহ আশপাশের প্রায় ২০ লাখ মানুষ, যাদের জন্য এটি ছিল স্বপ্নের মতো একটি স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র।
পিরোজপুর জেলা হাসপাতালের ইতিহাস দীর্ঘ। ৩১ শয্যা থেকে শুরু হয়ে ২৫০ শয্যায় উন্নীত হওয়ার এই যাত্রায় কাঠামো তৈরি হয়েছে, কিন্তু সেবার চাকা ঘুরছে না। ২০২০ সালের জুনে কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও কোভিড মহামারির কারণে তা পেছাতে পেছাতে শেষ হয় ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে। কিন্তু এখনো একটি গুরুত্বপূর্ণ সরঞ্জাম—লিফট—সংস্থাপন হয়নি। ফলে সাততলা ভবনটি হয়ে আছে এক অচল দালান।
এই সংকট কেবল একটি প্রশাসনিক জটিলতা নয়—এটি একটি মানবিক বিপর্যয়। প্রতিদিন গড়ে ৫০০ রোগী আসেন এই হাসপাতালে। ২০০ জনের বেশি রোগী ভর্তি থাকেন, যেখানে শয্যার সংখ্যা ১০০। অনেক রোগীকে ঠাঁই নিতে হয় বারান্দা ও মেঝেতে। নার্স ও ডাক্তারদের পরিশ্রমের সীমা থাকলেও, পরিসর নেই। উন্নত ভবনটি থাকলেও ব্যবহার করতে না পারা যেন এক নির্মম পরিহাস।
গণপূর্ত বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী জানালেন, লিফটের দাম বেড়ে যাওয়ায় নতুন দরপত্র আহ্বান করতে হয়েছে। এই দেরির দায় কার? বাজেট পরিকল্পনায় কি ভবিষ্যদ্বাণী করার দায় ছিল না? দেশের প্রতিটি উন্নয়ন প্রকল্পে কি এমনই অদক্ষতা চলবে?
এই সংকটের সমাধান জটিল নয়, কিন্তু দরকার দ্রুত সিদ্ধান্ত ও আন্তরিকতা।
হাসপাতাল ভবন তৈরি মানেই স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে যাওয়া নয়। তার জন্য প্রয়োজন পরিকল্পনার বাস্তবায়ন ও মানুষের দুর্ভোগকে গুরুত্ব দিয়ে দেখা। পিরোজপুরের নতুন হাসপাতাল ভবন যেন শুধুই একটি বন্ধ ভবন না হয়ে ওঠে, বরং হয়ে ওঠে ২০ লাখ মানুষের জন্য একটি বাঁচার আশ্রয়—এটাই প্রত্যাশা।
Comment here