জাতীয়

শেখ হাসিনার মধ্যে বঙ্গবন্ধুকে আমরা দ্বিতীয়বার পেয়েছি: গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী

অনলাইন ডেস্কঃ
গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বলেছেন, ‘বাঙালি জাতির অস্তিত্বের উৎস হিসেবে শেখ হাসিনার মাঝে বঙ্গবন্ধুকে আমরা দ্বিতীয়বার পেয়েছি। শেখ হাসিনার মাঝে আমরা খুঁজে পাই বঙ্গবন্ধুর প্রতিচ্ছবি, খুঁজে পাই বাঙালি জাতির অস্তিত্বের উৎস। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ও ত্যাগ না থাকলে বাংলাদেশ হতো না। জাতিকে পরিত্রাণ দেওয়ার জন্য, ৩০ লাখ শহিদের স্বপ্নকে স্বার্থক করার জন্য, বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত বিপ্লব সুখী, সমৃদ্ধ সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠার জন্য ষড়যন্ত্র, আক্রমণ, আঘাত সবকিছু থেকে শেখ হাসিনা রক্ষা পেয়েছেন। শেখ হাসিনার নেতৃত্ব পাওয়া আমাদের জাতির জন্য গৌরবের’।

আজ মঙ্গলবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় গণপূর্ত অধিদপ্তরের সম্মেলন কক্ষে গণপূর্ত অধিদপ্তর আয়োজিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৪তম শাহাদত বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষ্যে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।

গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রকে যারা মেনে নেয়নি, তারা স্বাধীন বাংলাদেশকে মেনে নেয়নি, স্বাধীন বাংলাদেশের স্রষ্টাকেও মেনে নিতে পারেনি। তারা বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশকে ধ্বংস করার জন্য চেষ্টা করেছে। এখনও সেই চেষ্টা চলছে। সেই চেষ্টা থেকে আত্মরক্ষার জন্য সকলের সোচ্চার হওয়া সময়ের দাবি। ১৯৭১ সালের খুনীরা ১৯৭৫ সালে পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে হায়েনার মতো ঝাঁপিয়ে পড়েছিল’।

স্বাধীনতার পরাজিত শত্রু ও প্রতিক্রিয়াশীল চক্রের সম্মিলন এবং বিদেশি ষড়যন্ত্রের সমম্পৃক্ততায় বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড হয়েছিল উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র, সৌদি আরব, চীনসহ অনেকগুলো রাষ্ট্র আমাদের অভ্যুদয়কে মেনে নেয়নি। তারা পাকিস্তানকে সাপোর্ট দিতো। তারা বঙ্গবন্ধুর জীবদ্দশায় বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়নি। তারা বঙ্গবন্ধুর কুলাঙ্গার খুনীদের প্রতিষ্ঠিত করেছে, আশ্রয় দিয়েছে, প্রশ্রয় দিয়েছে’।

বাংলাদেশকে যারা পাকিস্তান বানাতে চেয়েছিল, তারা এখনো সোচ্চার উল্লেখ করে মন্ত্রী আরো যোগ করেন, ‘খালেদা জিয়া রাজশাহীতে জনসভায় বক্তৃতায় বলেছেন মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মুজাহিদ, দেলোয়ার হোসেন সাঈদী, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী এরা যুদ্ধাপরাধী নয়, এদের রাজনৈতিকভাবে বন্দী করা হয়েছে। অথচ ১৯৭১ সালে এদের ভূমিকা প্রকাশ্য দিবালোকের মতো সত্য। খালেদা জিয়া রাষ্ট্র ক্ষমতার মোহে অন্ধ ছিলেন, অপরদিকে শেখ হাসিনা ক্ষমতার ঝুঁকি নিয়ে, সাহসী সিদ্ধান্ত নিয়ে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করেছেন। শেখ হাসিনা বিশ্বের অনেক রাষ্ট্রের মতো খুনীদের সাথে সমঝোতা করেননি’।
শ ম রেজাউল করিম বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকে হত্যার নেপথ্যে ইন্দনদাতা ছিলেন জিয়াউর রহমান। যে ‍জিয়াউর রহমানকে বঙ্গবন্ধুর বদান্যতায় বীর উত্তম উপাধি দেওয়া হয়েছিল, একের পর এক পদোন্নতি দিয়ে মেজর জেনারেল করা হয়েছিল। ‍সেই জিয়াউর রহমান অমানবিক, অকল্পনীয় পশুপ্রবৃত্তির মানসিকতার কারণে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার জন্য সৈনিকদের অনুমতি দিয়েছেন।
জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুকে স্যালুট করতে সামনে যেতে পারতেন না, তিনি ষড়যন্ত্র করে বঙ্গবন্ধু হত্যার নেপথ্যে চাবিকাঠি নেড়েছেন। এজন্য তাকে বলা হয় বঙ্গবন্ধু হত্যার মাস্টারমাইন্ড। তিনি বঙ্গবন্ধুর খুনীদের রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় পুনর্বাসন করেছেন, খুনীদের বিচার করার পরিবর্তে হাইকমিশনে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ৩১শে ডিসেম্বর জেলখানার গেট খুলে দিয়ে স্বাধীনতাবিরোধী সাজাপ্রাপ্ত, বিচারাধীন ও তদান্তাধীন সবাইকে ছেড়ে দিয়েছেন জিয়াউর রহমান। ১৯৭৯ সালের ৬ই এপ্রিল ইনডেমনিটি অডিন্যান্স পার্লামেন্টে পাশ করেছেন’।

মন্ত্রী বলেন, ‘সমকালীন বিশ্বে সবচেয়ে বিপ্লবী নেতা ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, যিনি জাদুকর হিসেবে সারা দুনিয়ায় নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু ছিলের হিমালয়ের মতো উদার, বঙ্গোপসাগরের মতো গভীরতার মানুষ। বঙ্গবন্ধুর মতো বিশাল মনের মহানুভব মানুষকে পাকিস্তানিরা ফাঁসি দিতে পারেনি। বঙ্গবন্ধু প্রধানমন্ত্রী হতে চাননি, ফাঁসির রজ্জুকে স্বাগত জানিয়েছিলেন, বাংলার মানুষের ভালোবাসার সাথে বেঈমানি করেননি। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন পাকিস্তানিরা আমাকে খুন করেনি। বাঙালিরা আমাকে মারবে না। সেই মানুষকেও নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয়েছে। এটাই বাস্তবতা।

মন্ত্রী বলেন, “বঙ্গবন্ধু হত্যার কারণে জাতি কতটা পিছিয়েছে তা আমরা আজ উপলব্ধি করতে পারছি। বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে আজ বাংলাদেশ থাকতো সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়ার চেয়ে উন্নত। অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসায় বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে যেতো। বঙ্গবন্ধু ভেবেছিলেন জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করতে হলে একটা জাতীয় ধারণা থাকতে হবে। তার আগেই বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হলো’।

আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক বলেন, ‌‌‘খালেদা জিয়াও জিয়াউর রহমানের পথ ধরে বঙ্গবন্ধুর খুনীদের নানাভাবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তার সরকার আমলে শেখ হাসিনাসহ সম্পূর্ণ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বকে ধ্বংস করে দেয়ার জন্য রাষ্ট্রীয়ভাবে গ্রেনেড হামলার আয়োজন করেছেন। জঙ্গিদের বিদেশে চলে যওেয়ার সুযোগ করে দিয়েছেন। ২১শে আগস্টের নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ডকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার জন্য জজ মিয়া কাহিনী তৈরি করেছেন’।

গণপূর্ত অধিদপ্তরের চেয়ারম্যান মো. সাহাদাত হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. শহীদ উল্লা খন্দকার, মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. আখতার হোসেন, জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মো. রাশিদুল ইসলাম, স্থাপত্য অধিদপ্তরের প্রধান স্থপতি কাজী গোলাম নাসির, নগর উন্নয়ন অধিদপ্তরের পরিচালক ড. খুরশিদ জাবিন হোসেন তৌফিক প্রমুখ বক্তব্য দেন।

Comment here