কাউখালী

জনতার জননী উপধি পেলেন কাউখালির ইউএনও খালেদা খাতুন রেখা

কাউখালী প্রতিনিধি:
মা যেমন করে সন্তানকে আঁচলে বেঁধে রাখে জীবন রক্ষার জন্য। তেমনি কাউখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোসাঃ খলেদা খাতুন রেখা তিনি কাউখালীর মানুষকে, করোনার হাত থেকে মুক্ত করে ভালো রাখার জন্য, নিজের জীবন বাজি রেখে সকাল থেকে সন্ধ্যা, সন্ধ্যা থেকে ভোর একটানা প্রতিদিন ছুটে চলছে উপজেলার এ প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত।
চোখে ঘুম নেই, নেই খাওযার চিন্তা, সার্বক্ষণিক শুধু ছুটে চলা, কারো কোনো কষ্ট হচ্ছে কিনা, কেউ না খেয়ে আছে কিনা, কেউ অসুস্থ হয়ে পড়েছে কিনা, কেউ বিদেশ থেকে দেশে আসছে কিনা, কেউ আবার জাহাজ থেকে কিনারে উঠছে কিনা, কেউ আবার করোনা ভাইরাস নিয়ে এসে সমাজে ছড়ায় কিনা, মানুষকে কষ্ট দেয় কিনা, যেখানেই খোঁজ পান মানুষ উন্মুক্ত ভাবে চলা ফেরা করছে দলবেঁধে বা বাজার বসিয়ে সামাজিক নিরাপত্তা ক্ষুন্ন করছে কেউ, সেখানে ছুটে যান তিনি সকলকে বুঝিয়ে সামাজিক দূরত্ব ঠিক রেখে ঘরবন্দি করার জন্যে।
কেউ না খেয়ে কষ্টে আছে এই খবর পেলেই সেখানে খাবার নিয়ে চলে যান খাবার পৌঁছে দিতে। এছাড়া উপজেলার ভবঘুরে মানসিক ভারসাম্যহীন অনাহারী মানুষগুলোকে রাতে নিজে ঘুরে ঘুরে নিজ হাতে খাবার পৌঁছে দেন, যে খেতে পারে না এমনকি তাকে খাওয়াই দেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। হোটেল-রেস্তোরাঁ বন্ধ থাকায় অনাহারী বাজারের কুকুরগুলো না খেয়ে যাতে কষ্ট না পায় যার জন্য নিয়মিত রাস্তায় ঘুরে ঘুরে দিন-রাত তাদের খাবার নিজ হাতে দেন তিনি। যার ফলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার গাড়ির শব্দ পেলেই দলবেঁধে কুকুরগুলো দেহরক্ষীর নেয় তাকে ঘিরে ধরেন। যা না দেখলে কাউকে বোঝানো সম্ভব না এ যেন মায়ের প্রতি সন্তনের অন্ধ ভালোবাসা। এছাড়া গবাদি পশু রক্ষার জন্য তিনি প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের একটি বিশেষজ্ঞ টিম দিয়ে ভ্রাম্যমাণ চিকিৎসা সেবা ব্যবস্থা করে এক অনন্য নজির সৃষ্টি করেছেন।
বাংলাদেশে করোনার সংক্রমন ছড়িয়ে পড়ার পর দম ফেলার সময় নাই স্থানীয় প্রশাসনের। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করে যাচ্ছেন সকলেই। তবে সরকারি নির্দেশনা ছাড়াও করোনার সংক্রমন রোধে অনেক কর্মকর্তা নিয়েছেন ব্যতিক্রমী সব উদ্যোগ। তেমনি উপরের লেখা কাজগুলো বাস্তবায়ন করে জনতার কাছে মানবতার মা উপাধি লাভ করেছেন পিরোজপুরের কাউখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোছাঃ খালেদা খাতুন রেখা।
করোনা শুর প্রথম থেকেই যখন সরকার দেশকে ঝুঁকির ঘোষণা দিলেন ঠিক তখনই তিনি সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে মানুষকে ঘরে রাখার জন্য নিয়েছিলেন ব্যতিক্রমী সব পদক্ষেপ। তিনি সমস্ত হাট-বাজার বন্ধ করে দিয়ে মানুষের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য হাট-বাজার যার যার বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছিলেন তিনি। ৫০থেকে ৬০ টি ভ্যান, মিনি ট্রাক, অটো ভ্যান, অটোরিকশায় ব্যানার ঝুলিয়ে ভ্রাম্যমান বাজার সাজিয়ে উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নে ভাগ করে করে নিজ দাযয়িত্বে প্রতিদিন পৌঁছে দিতেন এই সমস্ত বাজার। তরি তরকারি, মাছ, মাংস, খাবার, সবই পৌঁছে দিচ্ছেন। শিক্ষিত যুবক ছেলেদের নিয়ে গঠন করেছেন স্বেচ্ছাসেবক টিম। তাদের মোবাইল নাম্বার এবং নিজের মোবাইল নাম্বার উপজেলার সর্বত্র ছড়িয়ে দিয়ে যেখানে ভ্যান বা অন্যান্য যানবাহন যেতে পারে না তাদের ঘরে খাদ্য সামগ্রী এবং বাজার পৌঁছে দেয় স্বেচ্ছাসেবক টিম । করোনার মধ্যে কাউকে যেন ঘর থেকে বাহিরে আসতে না হয়।
আরেক ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়ে ছিলেন তিনি, তা হল কাউখালী পাইলট স্টেশনে যে সমস্ত জাহাজ নদীতে নোঙর করে, সেই সমস্ত জাহাজের বিদেশি লোকজনকে যাতে কিনারে আসতে না হয়। তাদের খাবার দাবার তরিতরকারি সবকিছুই ব্যানার ঝুলিয়ে ট্রলার দিয়ে নিজেই পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছেন। যাতে জাহাজের কোন মানুষের কোন কষ্ট না পায়। নাবিক এবং স্টাফদের কোন প্রয়োজনে যাতে তীরে আসতে না হয় সেই জন্য এই সমস্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন। বাজারে এসে করোনা আক্তান্ত কেউ করোনাভাইরাস ছড়াতে না পারে সব দিকেই নজর তার সার্বক্ষণিক।
যেখানে তিনি করোনায় করণীয় এবং স্কুল বন্ধ থাকাকালীন শিক্ষা লাভের উপায় সম্বলিত নির্দেশনা দিয়ে লেখাপড়ায় উৎসাহ যুগিয়েছেন । ঘটনার শুরু থেকেই সকাল থেকে সন্ধ্যা নিজেই হাতে মাইক নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন রাস্তা ঘাটে পথে-প্রান্তরে সতর্ক করেছেন মানুষকে কোরোনা সম্পর্কে। বাজারদর নিয়ন্ত্রণ এবং ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেছেন তিনি নিয়মিত। তার সাথে সবসময় সহযোগী হিসেব কাজ করে প্রশংসা কুড়িয়েছেন প্রকল্পপ বাস্তবায়ন কর্মকর্তা জিএম সাইফুল ইসলাম । যার ফলে এই উপজেলায় কেউ করোনায় আক্রান্তত হয় নাই এখন । অন্য জেলা থেকে একজন আক্রান্ত রোগী আসলেও সে এখন সুস্থ। অক্লান্ত পরিশ্রম আর নতুন নতুন উদ্ভাবনের ফলে উপজেলা বাসি আজ তাকে মানবতার মা হিসেবেই চেনেন সবাই।

Comment here