ব্রেকিং নিউজ

ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’-এর প্রভাবে উপকূলীয় জেলা পিরোজপুরে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতিঃঃ ভেঙ্গে গেছে বেড়িবাঁধ, তলিয়ে গেছে ফসলি জমি,মাছের ঘের

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’-এর প্রভাবে বুধ থেকে শুক্রবার অতি বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে উপকূলীয় জেলা পিরোজপুরে ৭ উপজেলায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। নদী তীরবর্তী চর ও নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে বাসিন্দাদের দুর্ভোগের মধ্যে ফেলেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ভরা পূর্ণিমার অস্বাভাবিক জোয়ারের পানি জেলার বিভিন্ন স্থানের বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে ঢুকে পড়ায় জেলার মঠবাড়িয়ার, ইন্দুরকানী, ভান্ডারিয়া, কাউখালী, স্বরূপকাঠি (নেছারাবাদ), নাজিরপুর ও পিরোজপুর সদর উপজেলায় নদী তীরবর্তী গ্রামগুলো প্লাবিত হয়ে প্রায় ৫০টি গ্রাম তলিয়ে যায়। এতে কাঁচা রাস্তার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার পাশাপাশি মাছের ঘের, ধান, রবি শষ্য ও পানের বরজের ক্ষতি হয়েছে।

তথ্যানুযায়ী জানা গেছে, জেলার ৭ উপজেলায় আবাদকৃত ১৬৭ হেক্টর আউশ ধানের বীজতলা, ৭ হাজার ৩১৮ হেক্টর আবাদী জমি, ১ হাজার ৩৩৫ হেক্টর সবজি
ক্ষেত, ১৪১ হেক্টর জমির পানের বরজসহ ২১২ হেক্টর বিভিন্ন রবি শষ্যের ক্ষেত সম্পূর্ণ পানির নিচে তলিয়ে গেছে। ৫৯৬ হেক্টর জলাশয়ের দুই হাজার ১৫৭টি ঘের ও পুকুর তলিয়ে গেছে। প্রায় পাঁচ কোটি ৬০ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে মৎস্য চাষীদের।

মঠবাড়িয়ার বলেশ্বর নদ তীরবর্তী বেড়িবাঁধ উপচে অর্ধশত গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। মাঝের চরের সাড়ে চার কিলোমিটার বাঁধ জোয়ারের তোড়ে সম্পূর্ণ ভেসে গেছে। বলেশ্বও নদের মাঝের চরের সাড়ে ৪ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ জোয়ারের তোড়ে সম্পূর্ণ ভেসে গেছে। মাঝেরচর, ক্ষেতাচিড়া জেলেপল্লী, বড়মাছুয়া, খেজুরবাড়িয়া, ভোলমারা, তুষখালী, ছোট মাছুয়া, জানখালী, বেতমোর, উলুবাড়িয়াসহ অন্তত অর্ধশত গ্রামে বাঁধ উপচে লোকালয় জলমগ্ন হয়ে পড়ে। স্থানীয়রা জানান, ইয়াসের প্রভাবে ওই এলাকায় অন্তত তিন হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে চরম দুর্ভোগে পড়েছে। বর্তমানে বড়মাছুয়া স্টিমারঘাট ও লঞ্চঘাট বাজার চরম ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এছাড়া বিপন্ন বাঁধের ওপর বৈদ্যুতিক পিলারগুলো হেলে পড়ে নদীগর্ভে বিলীনের আশঙ্কা রয়েছে।

ভান্ডারিয়া উপজেলায় বলেশ্বর নদের শাখা কচা এবং পোনা নদী তীরবর্তী এলাকায় বাঁধ উপচে পানি লোকালয়ে ঢুকে পড়ায় উপজেলার তেলিখালী, নদমুলা, ধাওয়া, গৌরীপুর, ইকরি, ভিটাবাড়িয়া ইউনিয়ন এবং ভান্ডারিয়া পৌর শহর প্লাবিত হয়েছে। উপজেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য সচিব জানান, উপজেলায় কাঁচা, আধাপাকা ৩৫০০ এবং মোটামুটি পাকা ১৫০০ বাড়িঘরসহ প্রায় ৫০০০ বাড়িঘরের ¶তি হয়েছে। প্রায় ১২/১৩শ হেক্টর জমির আউশের বীজতলাসহ ধানের মাঠ পানিতে তলিয়ে গেছে। ২৪শ খামারির মাছ পানিতে ভেসে গেছে। এছাড়াও পান বরজ এবং মৌসুমি সবজির ব্যপক ¶তি হয়েছে।

ইন্দুরকানী উপজেলার পাড়েরহাট, উমেদপুর, টগড়া, কালাইয়া, চাড়াখালী, চরবলেশ্বর, খোলপটুয়া, সাঈদখালী, চন্ডিপুর গ্রামের বেড়িবাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করছে। এতে প্লাবিত হয়েছে উপজেলার কচা ও বলেশ্বর নদী তীরবর্তী প্রায় ২০ গ্রাম। ফলে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন এ উপজেলার কয়েক হাজার বাসিন্দা। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অধিকাংশ গ্রামীণ সড়ক। ভেসে গেছে ঘের-পুকুরের মাছ। ডুবে গেছে কৃষি ক্ষেত এ উপজেলার ৯৪ কিলোমিটার বাঁধের বেশির ভাগ ক্ষতি হয়। এ উপজেলায় বেড়িবাঁধ ভেঙে ২১২০ হেক্টর জমির আউশ ধান ক্ষেতে পানিতে ডুবে রয়েছে। এছাড়া ১৫০ হেক্টর জমির নানা ধরণের শাক-সবজির মারাত্মক ¶তি হয়েছে। ভেসে গেছে সাত শতাধিক বদ্ধ জলাশয়ের মাছ। এতে ক্ষতি হয়েছে ১ কোটি ৬১ লাখ ২৫ হাজার টাকার।

কাউখালী উপজেলার ৫টি ইউনিয়নের প্রায় ২৮টি গ্রামের নিম্মাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। তলিয়ে গেছে বাড়িঘর, ফসলি জমি, পুকুর ও ঘের। স্বাভাবিক জোয়ারের কারণে কাউখালীর তিনটি ফেরিঘাটের গ্যাংওয়ে তলিয়ে গেছে। স্বাভাবিকের চেয়ে ৫থেকে ৬ফুট বেশি উচ্চতায় কচা নদীর পানি পাঙ্গাঁসিয়া বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে লোকালয়ে প্রবেশ করেছে।
জেলার নাজিরপুর উপজেলার ৯ টি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। প্রায় ৫ সহস্রাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। রাস্তাঘাট, মাছের ঘের, সবজি ক্ষেতসহ বিভিন্ন ফসলের ব্যাপক ¶তি হয়েছে।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আব্দুল বারি জানান, ‘ইয়াস’-এর প্রভাবে জেলার সাত উপজেলায় দুই হাজার ১৫৭ টি পুকুর ও ঘেরের মাছ ভেসে যায়। এতে ক্ষতি হয় ৫ কোটি ৬০ লাখ টাকা। এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মেহেদি হাসান জানান, পানির প্রবল চাপে ৩ কিলোমিটার সম্পূর্ণ এবং ৩ কিলোমিটার আংশিক বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

Comment here