ব্রেকিং নিউজ

আম্পানের কবলে পড়ে পিরোজপুরে ৩ জনের মৃত্যুঃ বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিতঃ কাঁচা ঘরবাড়ি, মাছের ঘের ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
পিরোজপুরের বুধবার ঘূর্ণিঝড় আম্পানের কবলে পড়ে প্রাণ গেল তিন জনের। এরমধ্যে মঠবাড়িয়ায় দুজন এবং ইন্দুরকানিতে একজন মারা যান। এছাড়া ঝড়ো বাতাস ও জোয়ারের পানিতে কাঁচা ঘরবাড়ি, বেড়িবাঁধ ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
মঠবাড়িয়া উপজেলায় আম্পানের কবলে পড়ে প্রাণ গেল দু’জনের। তাদের মধ্যে একজন মারা গেছেন বাড়ির সীমানা প্রাচীরের নিচে চাপা পড়ে। অন্যজন নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য বের হয়ে ভয়ে মারা গেছেন। এই দু’জন হলেন মঠবাড়িয়া উপজেলার দাউদখালী ইউনিয়নের গিলাবাদ গ্রামের শাহজাহান মোল্লা (৫৫) এবং ধুপতি গ্রামের গোলেনুর বেগম (৭০)।
হাসপাতাল ও পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, বুধবার সন্ধ্যায় শাহজাহান মোল্লা শহর থেকে বাড়িতে ফিরছিলেন। বৃষ্টি ও ঝড়ো বাতাসে মঠবাড়িয়া সরকারি কলেজের পেছনে একটি বাড়ির সীমানা প্রাচীর ভেঙে শাহজাহান মোল্লার ওপর পড়ে। এতে তিনি গুরুতর আহত হন। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেল কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এদিকে ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাটের উম্মিদপুরে ঘূর্ণিঝড়ের আতঙ্কে হার্ট অ্যাটাকে শাহ আলম (৫৫) নামে এক ব্যক্তির মৃত্যু খবর পাওয়া গেছে। খবর পেয়ে তৎক্ষণাৎ সেখানে ছুটে যান জেলা প্রশাসক আবু আলী মোঃ সাজ্জাদ হোসেন মহোদয়। ঘূর্ণিঝড়ে আহত হয়েছে ২০জন।
এসময়ে শোকসন্তপ্ত পরিবারকে মানুষিক সান্ত্বনা প্রদান করেন। পাশাপাশি জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নগদ ১০,০০০ টাকা ও খাদ্য সহায়তাও প্রদান করেন।
এদিকে পিরোজপুরে ঘূর্ণিঝড় আম্পানের প্রভাবে ঝড়ো বাতাস ও জোয়ারের পানিতে কাঁচা ঘরবাড়ি, বেড়িবাঁধ ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বুধবার সন্ধ্যার পর বাতাসের তীব্রতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নদ-নদীর পানি বাড়তে শুরু করে। পানির উচ্চতা স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে পাঁচ থেকে ছয় ফুট বেশি হওয়ায় বেড়িবাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢুকে পড়ে। জেলার শতাধিক গ্রামের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। আম্ফানের আঘাতে জেলায় মৎস্য ও বিদ্যুৎ খাতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বুধবার সকাল থেকে পিরোজপুরের নদ-নদীগুলোতে জোয়ারের পানি বাড়তে থাকে। সকালে জোয়ারের পানির চাপে মঠবাড়িয়া উপজেলার মাঝের চরের বেড়িবাঁধ ভেঙে লোকালয় ও ফসলের খেত প্লাবিত হয়। সন্ধ্যায় জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পেলে জেলার শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়। রাত ৯টার দিকে প্রবল বাতাসে জোয়ারের পানিতে মঠবাড়িয়া উপজেলার খেতাছিড়া গ্রামের বেড়িবাঁধের কয়েকটি স্থান ভেঙে পানি লোকালয়ে ঢুকে পড়ে। এতে গ্রামের শতাধিক কাঁচা ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়। জোয়েরের পানি পাকা সড়ক উপচে লোকালয়ে ঢুকে পড়ায় বেশ কিছু সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এদিকে বাতাসের তোড়ে অসংখ্য গাছপালা ভেঙে গেছে এবং কিছু গাছ ঘরের ওপর পড়ায় সেগুলো বিধ্বস্ত হয়েছে।

পিরোজপুর সদর উপজেলার গাজীপুর গ্রামের হাসিব খান বলেন, ‘বাতাসে আমাদের ঘরের চালের টিন উড়িয়ে নিয়ে গেছে। গ্রামের অনেক কাঁচা ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গাছপালা ভেঙে গেছে। ইন্দুরকানি উপজেলার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা এ কে এম মহসিন উদ্দিন বলেন, ঘূর্ণিঝড়ে কাঁচা ঘরবাড়ি, গাছপালা, রবি শস্যের খেত, আউশের বীজতলা ও কলাবাগানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। পিরোজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবু হেনা মো. জাফর জানান, জেলায় ৩৫৭ হেক্টর জমির বোরো ধান মাঠে রয়েছে। আম্পানের প্রভাবে পানি বৃদ্ধির কারণে এ ধানের ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া গ্রীষ্মকালীন শাকসবজি, কলা, পান, পেঁপে, মুগ ডাল, চিনাবাদাম, মরিচের ক্ষতি হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির হিসেব নিরূপণ করা হচ্ছে।
ঘুর্ণিঝড় আম্ফানের তান্ডবে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় ঘেরের মাছ পানিতে বের হয়ে গেছে। সদর উপজেলার মৎস্য ও কৃষি খামারী অমলেশ রায় জানান,পানিতে তার ঘেরের প্রায় দুই লাখ টাকার মাছে ভেসে যায়। পিরোজপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আব্দুল বারী জানান, সুপার সাইক্লোন ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব ও জোয়ারে পানি বৃদ্ধির কারণে জেলার বিভিন্ন উপজেলায় ৬ হাজার ৭৫৫টি মাছের ঘের ও পুকুর পালিতে তলিয়ে গেছে। এতে ৫ হাজার ৫৭৫ জন মৎস্য চাষী ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন। প্রাথমিকভাবে পিরোজপুরে মৎস্য খাতে ৩ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। পাশাপাশি মুরগী খামারীদেরও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

মঠবাড়িয়া উপজেলার খেতাছিড়া গ্রামের রাজা মিয়া বলেন, বুধবার সন্ধ্যার পর বাতাস ও জোয়ারের পানি বাড়তে থাকে। রাত নয়টার পর থেকে খেতাছিড়া গ্রামের পাঁচ থেকে ছয়টি স্থানে বেড়িবাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢুকে পড়ে। এতে তার বাড়ি চার থেকে পাঁচ ফুট পানিতে ডুবে যায়। উপজেলার মাঝের চরের বাসিন্দা কবির হোসেন বলেন, রাতে মাঝের চর সাত থেকে আট ফুট পানিতে প্লাবিত হয়। চরের বেশির ভাগ ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কয়েক শ’ হাঁস-মুরগি ভেসে গেছে।
মঠবাড়িয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ঊর্মি ভৌমিক গতকাল বৃহস্পতিবার ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত কয়েকটি গ্রাম পরিদর্শন করেন। তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড়ে কাঁচা ঘর, রবিশস্য, সড়ক ও বেড়িবাঁধের ক্ষতি হয়েছে। জোয়ারের পানি লোকালয়ে ঢুকে পড়ে অনেক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের পিরোজপুর কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাশ বলেন, মঠবাড়িয়া উপজেলার বড়মাছুয়া, খেতাছিড়া, কচুবাড়িয়া, মিরুখালী ও রাজারহাটে বেড়িবাঁধ ও বাঁধের ঢালের কিছু ক্ষতি হয়েছে। খেতাছিড়া গ্রমে ৩৬ থেকে ৪০ মিটার বাঁধ ভেঙে গেছে।

স্বরুপকাঠী উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান রনি দত্ত জয় জানান, উপজেলাবাসীর আয়ের সবচেয়ে বড় ক্ষাত হলো কাঠ ব্যবসা এখানে প্রায় ১২শ’ শ্রমিক এবং প্রায় ৯শ’ ব্যবসায়ি তাদের জীবন জীবিকা এবং আয়ের উপর স্বরুপকাঠী অর্থনীতি। ঘূর্নিঝর আম্ফানে স্বরুপকাঠী ১০-১২ ফুট পানি বৃদ্দি পাওয়ায় প্রায় ৫০লাখ ঠঅকার টাকার গাছ ভেসে গেছে।

Comment here