পিরোজপুর সদর

পিরোজপুরে অপচিকিৎসায় স্কুলছাত্র মৃত্যুঃ জেলা হাসপাতালের এ্যাম্বুলেন্স চালক,ফার্মাসিস্ট, নৈশ প্রহরী ও দুই কাউন্সিলরপুত্রের নামে হত্যা মামলাঃ আটক-২

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
পিরোজপুর শহরতলীর নামাজপুরে জেলা সরকারী হাসপাতালের কর্মচারী ও দালাল চক্রের খপ্পরে পড়ে অপচিকিৎসায় স্কুল ছাত্র তুষার সেখ (১৪) মৃত্যু’র ঘটনায় পিরোজপুর সদর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের হয়েছে। নিহত স্কুল ছাত্রের পিতা সোহাগ সেখ বাদী হয়ে বৃহস্পতিবার রাতে এ মামলা দায়ের করেন।
মামলায় পিরোজপুর জেলা হাসপাতালের এ্যাম্বুলেন্স চালক কবির হোসেন, হাসপাতালের ফার্মাসিস্ট সচিন রায়, হাসপাতালের নৈশ প্রহরী মাজেদুল ইসলাম, পিরোজপুর পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর মৃত আব্দুস সালাম মধু এবং বর্তমান পৌর কাউন্সিলর লায়লা পারভীনের দুই ছেলে আলী হাসান লিয়ন ও আলী ইমাম অন্তুকে এজাহারভুক্ত এবং আরও ২/৩ জন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে আসামী করা হয়েছে। এজাহারভুক্ত আসামীদের মধ্যে আলী হাসান লিয়ন ও আলী ইমাম অন্তুকে পুলিশ বুধবার রাতেই গ্রেফতার করে।
পিরোজপুর সদর থানার ওসি মো. নুরুল ইসলাম বাদল জানান, অপচিকিৎসায় স্কুল ছাত্র তুষার সেখ নিহতের ঘটনায় থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের হয়েছে। এ ঘটনায় দুই জন আটক রয়েছে। মামলার এজাহারবুক্ত অন্য আসামীদের গ্রেফতারের জন্য পুলিশ চেষ্টা চালাচ্ছে।
এদিকে, অপচিকিৎসার সাথে জড়িত পিরোজপুর জেলা হাসপাতালের তিন কর্মচারী হাসপাতালের এ্যাম্বুলেন্স চালক কবির হোসেন, ফার্মাসিস্ট সচিন রায়, এবং নৈশ প্রহরী মাজেদুল ইসলাম কর্তৃপক্ষের বিনা অনুমতিতে বৃহস্পতিবার থেকে কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছে।
পিরোজপুর জেলা হাসপাতালের আবসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. নিজাম উদ্দিন জানান, বিনা অনুমতিতে কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকার বিষয়ে উক্ত তিন কর্মচারীকে শোকজ করা হয়েছে। তাছাড়া তাদের বিরুদ্ধে থানায় হত্যা মামলা দায়ের হওয়ায় বিধিমোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, গত বুধবার বিকেলে বন্ধুদের নিয়ে পিরোজপুর শহরতলীর মুক্তারকাঠী এলাকায় বলেশ্বর নদীর পাড়ে ঘুরতে গিয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় গা ভেঙ্গে যায় স্কুল ছাত্র তুষারের। তাকে পিরোজপুর জেলা হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তাকে দ্রুত খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার জন্য রেফার করেন। পরে হাসপাতালের এ্যাম্বুলেন্সে করে খুলনার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেওয়ার পথে এ্যাম্বুলেন্স চালক গাড়ি থামিয়ে পিরোজপুর জেলা হাসপাতালে ফার্মাসিস্ট সচিন রায়, নৈশ প্রহরী মাজেদুল ইসলামসহ একটি দালাল চক্রকে নিয়ে তাদের মাধ্যমে আহত তুষারকে খুলনা না নিয়ে স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা করানোর জন্য স্বজনদের সাথে দেনবার করে। তাদের কথায় আশ্বস্ত হয়ে তুষারের স্বজনরা ৩০ হাজার টাকা চুক্তিতে স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা করাতে রাজী হয়। তারা (দালাল চক্র) তুষারকে পিরোজপুর পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর মৃত আব্দুস সালাম মধু’র নামাজপুর বাড়ির বৈঠকখানায় (কাঁচারী ঘর) নিয়ে সেখানেই তুষারের চিকিৎসার ব্যবস্থা করে ফার্মাসিস্ট সচিনের নেতৃত্বে ৬/৭ জনের তথাকথিত মেডিকেল টিম। তাদের ভুল এবং অপচিকিৎসায় রাত ১২ টার দিকে তুষার মারা যায়।

Comment here