পিরোজপুর প্রতিবন্ধী সেবাকেন্দ্র ১২টি পদের মধ্যে সাতটিই শূন্য, সেবা দিতে হিমশিম

পিরোজপুর সদরের প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্রের ১২টি পদের মধ্যে ফিজিওথেরাপি কনসালট্যান্টসহ ৭টি পদই শূন্য রয়েছে। পার্শ্ববর্তি বাগেরহাটে কর্মরত ফিজিওথেরাপি কনসালট্যান্ট প্রতি সপ্তাহের দুই দিন এ কেন্দ্রে এসে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। এ ছাড়া প্রতিষ্ঠানটিতে টেকনিক্যাল পদগুলোর মধ্যে শুধু একজন থেরাপি সহকারী কর্মরত থাকায় রোগীদের সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে বাকিদের।

থেরাপি সহকারী আরিফুল হাসান বলেন, প্রতি সপ্তাহে শুক্র ও শনিবার ছাড়া পাঁচ দিন রোগীদের সেবা দিতে হয়। প্রতিদিন গড়ে ৩৫ থেকে ৪০ জন রোগীকে একা থেরাপি সেবা দিতে খুব কষ্ট হয়।
ওই সেবাকেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন সারা দেশে এ ধরনের সেবাকেন্দ্র পরিচালনা করছে। পিরোজপুর কেন্দ্রে১১ ধরনের রোগীদের বিনা মূল্যে ১০ ধরনের সেবা দিয়ে আসছে এই সেবাকেন্দ্রটি। ২০১২ সালে পিরোজপুরে কাজ শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত ৪ হাজার ৮০৮ জন নিবন্ধিত ব্যক্তিকে থেরাপি সেবা দেওয়া হয়েছে। প্রতিদিন গড়ে ৩৫ থেকে ৪০ জন এখানে থেরাপি সেবা নেন। প্রতিবন্ধিতার ধরন নির্ণয়, ফিজিওথেরাপি, অকুপেশনাল থেরাপি, পুনর্বাসন, শ্রবণ, দৃষ্টি ও ভাষা শিক্ষণ, অটিজমবিষয়ক সেবা, পক্ষাঘাতগ্রস্তদের সেবা, কাউন্সেলিং, সচেতনতা কার্যক্রম, মোবাইল থেরাপি ভ্যান সার্ভিস সেবা এখানে দেওয়া হয়।
এখানে থেরাপি নিয়ে আসা শিশু ও ব্যক্তিদের সেবা দিতে কষ্ট হচ্ছে। এখানে নিয়মিত একজন ফিজিওথেরাপি কনসালট্যান্ট দরকার।
প্রতিবন্ধীবিষয়ক কর্মকর্তা প্রিয়ংবদা ভট্টাচার্য বলেন, অটিজম, শারীরিক প্রতিবন্ধিতা, মানসিক প্রতিবন্ধিতা, দৃষ্টি প্রতিবন্ধিতা, বাক্‌প্রতিবন্ধিতা, শ্রবণপ্রতিবন্ধিতা, বুদ্ধিপ্রতিবন্ধিতা, শ্রবণ-দৃষ্টিপ্রতিবন্ধিতা, সেরিব্রাল পালসি, ডাউন সিনড্রোম, বহুমাত্রিক প্রতিবন্ধিতা রোগী এখানে সেবা ও সাহায্য পেয়ে থাকেন। এ ছাড়া স্ট্রোক প্যারালাইসিস, বাতব্যথা, কোমর-ঘাড়ব্যথা, কনুইব্যথা, মেরুদন্ডে ব্যথা, হাঁটুতে ব্যথা, স্পন্ডিলাইসিস, আর্থরাইটিস (অস্টিও ও রিউমাটয়ে), মুখ বাঁকা, পায়ের গোড়ালি ব্যথা, স্পোর্টস ও আঘাতজনিত সমস্যা ইত্যাদি রোগের চিকিৎসা এখানে দেওয়া হয়। পাশাপাশি প্রতিবন্ধীদের বিভিন্ন সহায়ক উপকরণ বিনা মূল্যে দেওয়া হয়। যার মধ্যে রয়েছে হুইলচেয়ার (অ্যাডাল্ট ও চাইল্ড), ট্রাইসাইকেল, এলবো ক্রাচ, অক্সিলারি ক্রাচ, টয়লেট চেয়ার, স্ট্যান্ডিং ফ্রেম, কর্নার চেয়ার, ওয়াকার, ফোল্ডিং ওয়াকার ও হিয়ারিং এইড।
পিরোজপুর শহরের মাছিমপুরে কবি আহসান হাবিব সড়কের একটি ভাড়া বাড়িতে স্থাপিত এই প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্রে সপ্তাহের পাঁচ দিন থেরাপি সুবিধাসহ বিভিন্ন সেবা দেওয়া হয়। এখানে ১২টি পদের মধ্যে আটটি টেকনিক্যাল পদ রয়েছে। আটটি টেকনিক্যাল পদগুলোর মধ্যে একজন থেরাপি সহকারী শুধু কর্মরত আছেন। বাকি ফিজিওথেরাপি কনসালট্যান্ট, ক্লিনিক্যাল ফিজিও থেরাপিস্ট, ক্লিনিক্যাল অকুপেশনাল থেরাপিস্ট, স্পিচ অ্যান্ড ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপিস্ট, থেরাপি সহকারীর দুটি পদের একটি ও টেকনিশিয়ানের দুটি পদ শূন্য রয়েছে। তবে বাগেরহাট কেন্দ্রে কর্মরত ফিজিওথেরাপি কনসালট্যান্ট সপ্তাহের মঙ্গল ও বুধবার পিরোজপুরের এই সেবাকেন্দ্রে সেবা দিয়ে আসছেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, নানা বয়সী প্রতিবন্ধী রোগী সেবা নিতে কেন্দ্রটিতে এসেছেন। প্রতিবন্ধী ছাড়াও শরীরে ব্যথার জন্য এখানে থেরাপি নিতে আসছেন অনেকে। অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতিতে সুসজ্জিত এ কেন্দ্রে উন্নত মানের থেরাপি চিকিৎসার ব্যবস্থা রয়েছে।
এ সময় কথা হয় সেবা নিতে আসা পল্লী দারিদ্র্যবিমোচন ফাউন্ডেশনের পিরোজপুরের সহকারী পরিচালক মারুফ হোসেনের (৫২) সঙ্গে। তিনি বলেন, ঘাড়ে ব্যথা ও ডান হাত অবশ হয়ে যাওয়ায় ১৫ দিন আগে থেরাপি নিতে শুরু করেছেন। এখন অনেকটা সুস্থ বোধ করছেন।
ইন্দুরকানি উপজেলার কালাইয়া গ্রাম থেকে আসা মাহামুদা বেগম বলেন, ‘আমার মেয়ে ফাতেমা আক্তার (৮) স্পাইনা বাইফিডা রোগে আক্রান্ত হয়। ফাতেমা দাঁড়াতে ও হাঁটতে পারত না। দুই বছর বয়স থেকে এখানে ওর থেরাপি চলছে। ছয় বছর থেরাপি নেওয়ার পর সে এখন একা একা হাঁটতে পারছে।’
পিরোজপুর প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্রের প্রতিবন্ধীবিষয়ক কর্মকর্তা প্রিয়ংবদা ভট্টাচার্য আরো বলেন, কেন্দ্রের সাতটি টেকনিক্যাল পদ শূন্য থাকায় এখানে থেরাপি নিয়ে আসা শিশু ও ব্যক্তিদের সেবা দিতে কষ্ট হচ্ছে। এখানে নিয়মিত একজন ফিজিওথেরাপি কনসালট্যান্ট দরকার। তবে সীমাবদ্ধতা থাকার পরও আমরা প্রতিবন্ধী ও ঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তিদের সর্বোচ্চ সেবা দিতে চেষ্টা করে যাচ্ছি।