লেখার শুরুতেই বলতে চাই, বহুল প্রচারিত মরীচিকার মত শোনানো আশার বাণীটা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলো। বাণীটি হলো, “বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলে কোন পড়ালেখা করতে হয় না!” এই কথাটি কীভাবে এত প্রচার পেয়ে ফুলে-ফেঁপে বড় হয়ে উঠেছে, সেটা এক রহস্য। তবে এর কোন সত্যতা নেই। এতদিন এত এত বিষয়ের প্রাথমিক একটা ধারণা পেয়েছ, বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে একটি বিষয়ের গভীরের কথা জানতে হবে, সেক্ষেত্রে পড়ালেখা কমে যাওয়ার কোন কারণ নেই।
এজন্য তুমি যে বিষয়েই পড়তে যাও না কেন, ভালো করতে হলে তোমাকে নিয়মিত পড়ালেখা করতে হবে। অনেক সময় হয়তো পড়ালেখা করার পরও পরীক্ষা ভালো হবে না। কিন্তু সেসব কাটিয়ে ওঠা সম্ভব যদি তোমার বেছে নেওয়া বিষয়টা তোমার জন্য উপযুক্ত হয়।
বিষয়টা একটু বুঝিয়ে বলি, ভর্তি পরীক্ষায় সুযোগ পেয়ে যাওয়ার পর সবাই স্বাভাবিকভাবেই খুব খুশি হয়। সবাই “ভালো” বিষয়ে পড়তে চায়। কোন বিষয়ে পড়লে ভালো চাকরি পাওয়া যাবে, কোন বিষয়ে সুযোগ বেশি, সেটি অবশ্যই একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তবে নিজে ভালো ফলাফল করতে না পারলে ভালো বিষয়ে পড়ে কোন লাভ হবে না।
গণিতের পূজারিগনঃ
অর্থনীতি, ফিন্যান্স প্রভৃতি সকল বিষয়ই একজন শিক্ষার্থীর উজ্জ্বল ভবিষ্যত তৈরির জন্য সহায়ক হতে পারে। কিন্তু গণিতের ভিত দুর্বল, এমন কেউ যদি এই বিষয়ে পড়তে আসে, তাহলে তাকে হিমশিম খেতে হবে। কারণ, এই বিষয়গুলোতে গণিতের অনেক উচ্চতর স্তরের প্রয়োগমূলক কোর্স রয়েছে।
মুখস্থের বোলতাবৃন্দ:
আইন বিভাগ, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ প্রভৃতি বিষয়ে মুখস্থ করার দক্ষতা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কেউ যদি মুখস্থ করতে পছন্দ না করে, তবে এই বিষয়গুলি তাদের জন্য উপযুক্ত নয়। আইন বিভাগে ভালো করার জন্য যুক্তিবিদ্যাতেও পারদর্শী হওয়া প্রয়োজন।
বিভাগের গুরুত্ব ওজন দেখে নয়, তোমার সাম্যর্থ বুঝে বিষয় পছন্দ করো:
নামকরা বিভাগগুলো থেকে অনেক শিক্ষার্থীই পড়ালেখা শেষ করতে পারে না। ফলে, তাদের বিশ্ববিদ্যালয় জীবন অর্থহীন হয়ে যায়। তারা কোন ডিগ্রি না নিয়েই বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শেষ করে।
তাছাড়াও অনেকে ডিগ্রি নিয়ে বের হলেও বিষয়ের প্রতি কোন আকর্ষণ অনুভব করে না। তারা শুধু ডিগ্রির জন্যই পড়ালেখা করে।
কিন্তু এমনটা হবার কোন কারণ নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ পাবার পরে তোমার মনে যেই উৎসাহ-উদ্দীপনা, সেই উৎসাহ-উদ্দীপনা ধরে রেখেই তুমি সামনের দিনগুলো কাটিয়ে দিতে পারো যদি তুমি তোমার জন্য উপযুক্ত বিষয়ে পড়ো।
অভিনব উপায়ে ইংরেজি শিখো!
তোমার স্বপ্নের পথে পা বাড়ানোর ক্ষেত্রে তোমার ইংরেজির জ্ঞান কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারে!সেজন্য নিয়মিত শ্বব্দ চর্চার দরকার,চাইলে ইংরেজি মুভি দেখা যেতে পারে। তাছাড়াও বন্ধুদের নিয়ে গ্রুপ করে ইংরেজি বলা যেতে পারে
একটুখানি সচেতনতার ছোঁয়া:
উপযুক্ত বিষয় বাছাই করার জন্যে দরকার একটুখানি সচেতনতা। বিষয় বাছাই করার আগে তোমার পছন্দের বিষয়গুলোর পাঠ্যক্রম সম্বন্ধে খোঁজখবর নাও। কোন বিষয়ে কী ধরণের পড়ালেখা হয়, সে ব্যাপারে পরিষ্কার ধারণা নেয়ার জন্য মা-বাবার সাথে, বড় ভাই-বোনদের সাথে, শিক্ষকদের সাথে আলোচনা করো।
পড়ালেখার বিষয় তোমার পছন্দ হলে তুমি লেখাপড়া করেও আনন্দ পাবে
শুধু চাকরির কথা ভেবে কোনমতেই বিষয় বাছাই করবে না। যদি গণিতকে ভয় পাও, তবে অর্থনীতি এবং ফিন্যান্সের মত বিষয় নেবার আগে একটু ঠাণ্ডা মাথায় ভেবে নিও যে সেই ভয় কাটিয়ে উঠতে পারবে কি না। প্রয়োজন হলে যে ধরণের অংক তোমাদের করানো হবে, সেগুলো বুঝতে পারছো কি না, তা আগেই একটু ঝালাই করে নাও।
বিচারক হবার উচ্চাশা নিয়ে আইন বিভাগে ভর্তি হওয়া সমীচিন নয় যদি তুমি বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে মুখস্থবিদ্যার চর্চা না করতে চাও।
তোমার প্রথম ভালোবাসা:
এবার প্রথমের কথাটিতে ফিরে আসি, উপযুক্ত বিষয় বেছে নিলে পরীক্ষা খারাপ হলেও সামলে নেয়া সম্ভব। জীবনের সব পরীক্ষা তোমার কখনোই ভালো হবে না। কিন্তু তুমি যে বিষয় পড়ছো, সেটার প্রতি যদি তোমার ভালোবাসা থাকে, তাহলে তুমি সেই বিষয়ের পরবর্তী পরীক্ষাগুলোতে ভালো করার তাগিদ অনুভব করবে।
কিন্তু যেই বিষয়টি তোমার মোটেই পছন্দ নয়, সেই বিষয়ের পরীক্ষা খারাপ হলে তুমি আরো মনমরা হয়ে পড়বে, আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে। তখন পরবর্তীতে ভালো করা কঠিন হয়ে যাবে।
তাছাড়াও, তোমার পড়ালেখার বিষয় তোমার পছন্দ হলে তুমি লেখাপড়া করেও আনন্দ পাবে, পরবর্তীতে কর্মক্ষেত্রে গেলে তোমার কাজও তুমি উপভোগ করবে। সেই বিষয়ে তখন তুমি পরীক্ষার পড়ার বাইরেও পড়ে আনন্দ পাবে। তাই, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবার পর তোমার পরীক্ষার পড়ালেখা তো থাকবেই, তুমি নিজে থেকেও সেই বিষয়ে পড়তে চাইবে অর্থাৎ তুমি আর পড়ালেখা থেকে মুক্তি চাইবে না! পড়ালেখা তোমার জন্য উপভোগ্য হয়ে উঠবে!
এজন্য সবার প্রতি আহবান থাকবে বিষয়ের পছন্দক্রম ভেবেচিন্তে ঠিক করার জন্য। তোমাদের বিশ্ববিদ্যালয় জীবন সুন্দর হলেই আমার এই লেখাটি সার্থক হবে!
[লেখকঃ আবু সাঈদ সাব্বির আহমেদ]
Comment here