নাজিরপুর

নাজিরপুরে হাসপাতালে ঢুকে চিকিৎসককে মারধর করলো আ’লীগ নেতার শ্যালক

ফিরোজ মাহমুদ:
পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরী বিভাগে চিকিসৎকের জন্য নির্ধারিত চেয়ারে বসে মোবাইলে উচ্চস্বরে কথা বলার প্রতিবাদ করায় কাওসার উদ্দিন নামে এক চিকিৎসককে মারধর ও খুনের হুমকি দিয়েছে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোশারেফ হোসেন খানের শ্যালক এবাদুল করিম তরুন। অভিযুক্ত এবাদুল করিম তরুন ওই হাসপাতালের প্রধান ফটকে ঐশী ফার্মেসী নামক একটি ওষুধের দোকান পরিচালনা করেন। ডা. কাওসার উদ্দিন ওই হাসপাতালে মেডিকেল অফিসার হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।

গত ২৬ আগস্ট সন্ধ্যায় নাজিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরী বিভাগে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনা নিয়ে ওই দিন রাত ৮টা ৪৯ মিনিটে ডা. কাওসার উদ্দিন তার ফেসবুক ওয়ালে একটি ষ্ট্যাটার্স দেন। ওই ষ্ট্যাটার্সটি ফেসবুকে ভাইরাল হয় এবং একাধিক ব্যাক্তি নানা মন্তব্যসহ ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।

ফেসবুকে ষ্ট্যাটার্স দেয়ায় পরের দিন ২৭ আগস্ট সকাল ১০ টার দিকে অভিযুক্ত এবাদুল করিম তরুন ওই চিকিৎসককে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রতন কুমার ঢালীর কক্ষে ডেকে নিয়ে পুনরায় মারধর করে এবং খুনের হুমকি দেয়। এ ঘটনায় ওইদিন রাতে ডা. কাওসার উদ্দিন নাজিরপুর থানায় লিখিত অভিযোগ করলে পুলিশ অভিযোগটি মামলা হিসেবে গ্রহণ না করে সাধারণ ডায়েরী ভুক্ত করেছে।

ডা. কাওসার উদ্দিন জানান, গত ২৬ আগস্ট তিনি নাজিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরী বিভাগে কর্তব্যরত ছিলেন। সন্ধ্যা ৬ টার দিকে ওষুধ ব্যবসায়ী এবাদুল করিম তরুন একজন জ্বরের রোগী নিয়ে জরুরী বিভাগে আসেন। এ সময় তিনি হাসপাতালেই তার নির্ধারিত চেম্বারে ছিলেন। কয়েক মিনিট পরে জরুরী বিভাগে গিয়ে তিনি দেখেন এবাদুল করিম তরুন জরুরী বিভাগে চিকিৎসকদের জন্য নিধারিত চেয়ারটিতে বসে মোবাইলে উচ্চস্বরে কারো সাথে কথা বলছে। তিনি তাকে জরুরী বিভাগ থেকে বের হয়ে বাহিরে গিয়ে মোবাইলে কথা বলতে বলায় সে উত্তেজিত হয়ে ওই চিকিৎসকের ওপর আক্রমন করে এবং তাকে মারধর করে। এ সময় এবাদুল করিম তরুন ওই চিকিৎসককে নানা হুমকি ও ভয়ভীতি দেখান। এ নিয়ে তিনি তার ফেসবুক ওয়ালে একটি ষ্ট্যাটার্স দেন। পর দিন সকাল ১০ টার দিকে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রতন কুমার ঢালী ওই চিকিৎসককে তার কক্ষে ডেকে পাঠান। সেখানে গিয়ে ডা. কাওসার উদ্দিন অভিযুক্ত এবাদুল করিম তরুনকে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রতন কুমার ঢালীর সামনের চেয়ারে বসা দেখেন। সেখানে ফেসবুক ষ্ট্যাটার্স নিয়ে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে এবাদুল করিম তরুন ডা. কাওসার উদ্দিনকে পুনরায় মারধর করে এবং খুনের হুমকি দেয়।

তবে অভিযুক্ত এবাদুল করিম তরুন অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, জরুরী বিভাগে রোগী দেখা নিয়ে তার সাথে আমার তর্কবির্তক হয়েছে। মারধর বা হুমকির ঘটনা সত্য নয়।

ঘটনার বিষয়ে জানতে মুঠোফোনে কথা হলে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রতন কুমার ঢালী বলেন, ঘটনার পরের দিন সকাল ১০টার দিকে বিষয়টি ফয়সালা করে দেয়ার জন্য আমি উভয়কেই আমার রুমে ডেকেছিলাম। সেখানে আমরা আলাপ আলোচনা শুরু করলে ডা. কাওসার সেগুলো মুঠোফোনে ভিডিও করতে শুরু করে। তখন ওষুধ ব্যবসায়ী তরুনের সাথে তার তর্কবির্তক হয়। আমার সামনে মারধর বা হুমকির কোন ঘটনা ঘটেনি।

নাজিরপুর থানার ওসি মো. জাকারিয়া বলেন, ডা. কাওসার উদ্দিনের লিখিত অভিযোগটি ডায়েরী ভুক্ত করা হয়েছে এবং তদন্তের অনুমতির জন্য আদালতে আবেদন করা হয়েছে। আদালতের অনুমতি সাপেক্ষে তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Comment here