নিজস্ব প্রতিবেদক
টানা ১১ বছরের বেশি সময় ধরে ক্ষমতায় থাকার মাশুল ভালোভাবেই দিচ্ছে আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগের এখন রাজনৈতিক কোন প্রতিপক্ষ নেই। বিএনপি মাঠে নেই, নেই কোন বিরোধী দল। এমনকি আওয়ামী লীগের যে তীব্র সমালোচনা করা সুশীল সম্প্রদায়, তারাও লেজ গুটিয়ে আছে। এই অবস্থায় আওয়ামী লীগ মাঠে একা। কিন্তু আওয়ামী লীগ কখনোই একা থাকতে পারে না। আওয়ামী লীগের দরকার প্রতিপক্ষ। আর সেই প্রতিপক্ষ না থাকায় আওয়ামী লীগই এখন দুভাগে বিভক্ত হয়ে নিজেরা নিজেদের সঙ্গে লড়াই করছে। টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া সর্বত্র আওয়ামী লীগের এই অন্তকলহের বিষবাষ্প ছড়িয়ে পড়ছে। আগে ছিল স্থানীয় পর্যায়ে বিরোধ, এখন এটি জাতীয় পর্যায়ে বিরোধ দেখা যাচ্ছে। সংবাদপত্রে ফলায় করে আওয়ামী লীগের একপক্ষ, অন্যপক্ষকে গালি দিচ্ছে।
যার সর্বশেষ প্রতিফলন দেখলাম আওয়ামী লীগের পিরোজপুরের নেতা সাবেক এমপি এ কে এম এ আউয়াল এবং পিরোজপুরের এমপি ও মৎস্য প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিমের যুদ্ধ। তারা প্রকাশ্যে একে অন্যকে দোষারোপ করছেন। আউয়াল যেভাবে একজন এমপি এবং মন্ত্রীকে আক্রমণ করেছেন, যেভাবে তার ব্যক্তিগত ও পরিবার নিয়ে সাংবাদিকের কাছে তুলে ধরেছেন তা নজিরবিহীন। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল বলছে, এই একই আক্রমণ যদি সরকার বিরোধী কেউ করতো তাহলে নির্ঘাত তার বিরুদ্ধে মানহানির মামলা হতো। কিন্তু সব কিছু ছাপিয়ে এখন আউয়াল রেজাউলের বিরোধ মুজিববর্ষে প্রকাশ্য হয়েছে। গণমাধ্যম জুড়ে তাদের বাকযুদ্ধ চলছে। তবে একজনে শালীন এবং অপরজনের অশালীন।
আউয়াল- রেজাউলের বিরোধ যখন চলছে তখন ঢাকা ১৪ আসনের সাংসদ আসলামুল হক এর সঙ্গে নৌ পরিবহণ মন্ত্রণালয়ের বিরোধ প্রকাশ্য হয়েছে। নৌ পরিবহন মন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরি দায়িত্ব গ্রহণ করেই অবৈধ নদীর জমি দখলের জন্য উদ্ধার অভিযান শুরু করেছে। উদ্ধার অভিযানে কাটা পড়েছে আসলামের মাইসা পাওয়ার প্লান্টের একটি বড় অংশ। পরস্পর পরস্পরের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে অভিযোগ করছেন। আসলাম অভিযোগ করেছেন যে, তার সুনামহানির জন্য এটা করা হয়েছে। যদিও দৃশ্যপটে খালিদ নেই। কিন্তু নৌ পরিবহনের কর্মকর্তারা মন্ত্রীর নির্দেশে যে এটা করছে তা বলাই বাহুল্য।
শামীম ওসমান ও সেলিনা হায়াৎ আইভীর বিরোধ পুরনো। সেই বিরোধ বহুদিন ধরেই ক্ষণে ক্ষণে থেমে থেমে চলছে। সে বিরোধের কথা জনগন জানে। সাম্প্রতিক সময় শামীম ওসমান আবার আলোচনায় এসেছেন নানা রকম বিতর্কিত বক্তব্য দিয়ে।
আওয়ামী লীগ প্রাপ্ত সূত্র খবরে দেখা গেছে যে, গত এক বছরে সারাদেশে ৪৮টি সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। যেখানে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষ প্রকাশ্যে কোন্দলে জড়িয়ে নিজেদের মধ্যে মারামারি করেছে। এই সমস্ত সহিংসতায় মারা গেছেন এখন পর্যন্ত এগারোজন।
আওয়ামী লীগের সূত্রে বলা হচ্ছে যে, সারাদেশে সর্বত্রই আওয়ামী লীগ দুইভাগে বিভক্ত। আওয়ামী লীগের নেতারা প্রকাশ্যে একে অন্যের সমালোচনা করছেন। আগে ছিল স্থানীয় পর্যায়ে বিরোধ। এখন সেই বিরোধ কেন্দ্রীয় কমিটিতে ছড়িয়ে পড়েছে। আওয়ামী লীগের সদ্য প্রেসিডিয়ামে জায়গা পাওয়া শাজাহান খানের সঙ্গে আওয়ামী লীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক বাহাউদ্দীন নাছিমের বিরোধ পুরনো। দলের কেন্দ্রীয় কমিটির অনেক নেতাই পরস্পর মুখোমুখি। এরকম একটি পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক শক্তিমত্তা এবং সাংগঠনিক বিন্যাস নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে। অনেকে মনে করছে, আওয়ামী লীগকে তার প্রতিপক্ষরা কখনো হারাতে পারে না। আওয়ামী লীগকে হারায় আওয়ামী লীগরাই। আওয়ামী লীগের এই অভ্যন্তরীন কোন্দল সহিংসতা এবং কাঁদা ছোড়াছোড়ি কি আওয়ামী লীগকে আরেকটি পরাজয়ের দিকে নিয়ে যাবে এই প্রশ্ন উঠেছে রাজনৈতিক মহলে।–সূত্রঃ অনলাইন ডেস্ক।
Comment here